ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

দেড় যুগ ধরে অস্থায়ী টিনের ঘরে চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান

দেড় যুগ ধরে অস্থায়ী টিনের ঘরে চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান

মিঠামইনের কাটখাল ইউনিয়নের চর কাটখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই টিনের ঘরেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয় সমকাল

বিজয় কর রতন, মিঠামইন (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৪ | ২৩:৫১

কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের কাটখাল ইউনিয়নের চর কাটখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬ বছর ধরে ছোট্ট একটি টিনের ঘরে চলছে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার পাঠদান। নেই স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, বিদ্যুৎ সংযোগ ও সুপেয় পানির সুবিধাও। তীব্র গরমে অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়টিতে দ্রুত পাকা ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। 

১৯৮৯ সালে কাটখাল ইউনিয়নের কালনী নদীর পূর্ব তীরে চর কাটখাল গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় চর কাটখাল বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০১৩ সালে জাতীয়করণকৃত এ বিদ্যালয়ে ছয় শিক্ষকের বিপরীতে কর্মরত আছেন চারজন। স্কুলটিতে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ১৩০ জন। 

জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে নির্মিত স্কুল ভবনটি কালনী নদীর ভাঙনের কবলে পড়ায় ২০০৮ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা হয়। তার পর থেকে বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী টিনের ঘরে পাঠদান চালিয়ে আসছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০১৯ পর্যন্ত কাটখাল বাজার জামে মসজিদ এলাকায় একটি অস্থায়ী ঘরে ক্লাস পরিচালনা করা হয়। তার পর থেকে পূর্ব চর কাটখাল গ্রামে ২৫ শতাংশ জমিতে ছোট্ট একটি টিনের ঘর উঠিয়ে পরিচালিত হচ্ছে শিশুদের পাঠদান। ভবন সংকট নিরসনে মিলছে না বরাদ্দ। অস্থায়ী টিনের ঘরে পাঠ দিতে গিয়ে শিক্ষকদেরও নানা সংকটে পড়তে হচ্ছে। বিদ্যালয়টিতে নেই শিক্ষা উপকরণ, নেই শিশুদের খেলাধুলার সুবিধাও। ২০১৬ সালে দ্বিতীয় দফায় ভবন নির্মাণের আবেদন করেও কোনো সাড়া পায়নি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিন দেখা যায়, বিদ্যালয়ের একটিমাত্র টিনের ঘরে আছে ছোট্ট তিনটি শ্রেণিকক্ষ ও নামমাত্র একটি অফিস কক্ষ। এক কক্ষের শব্দে অন্য কক্ষে পাঠদান করানো দুষ্কর। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় বারান্দাহীন ঘরটিতে ফ্যান নেই, শিক্ষার্থীদের জন্য নেই টিউবওয়েল ও টয়লেট সুবিধা। প্রকৃতির ডাক ও পানি খেতে যেতে হয় প্রতিবেশীদের বাড়িতে। 
আলাপকালে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, গরমের দিনেও ফ্যান ব্যবহার হয় না, পানিও খেতে পারে না তারা। ঝড়ের দিনে ভয় লাগে। আকাশ মেঘ করলে দৌড়ে বাড়ি চলে যেতে হয়। শিক্ষকরা জানান, ভবন ও শিক্ষা উপকরণ সংকটের কারণে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে তারা যে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন, তা এই বিদ্যালয়ে শিশুদের পাঠদানে সমন্বয় করতে পারেন না। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল হক বলেন, সরকার যদি দ্রুত আমাদের ভবনসহ পানি, টয়লেট ও সুন্দর পরিবেশ করে দিত, তাহলে আমরা শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে পাঠদান করতে পারতাম। 
কাটখাল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম জানান, উপজেলা সমন্বয় সভায় ওই বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণ বিষয়ে তিনি আলোচনা করেছেন। কেন ভবনটি নির্মাণ হচ্ছে না, তা বুঝতে পারছেন না। শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করতে দ্রুত বিদ্যালয়টিতে ভবন নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে মিঠামইন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদেকুর রহমান বলেন, এ বিদ্যালয়টির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। শিগগিরই সরকারের চর ও হাওরাঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশাবাদী। 

আরও পড়ুন

×