ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

সৌদি খেজুরের মিষ্টতা বিলাচ্ছেন জাকির

সৌদি খেজুরের মিষ্টতা বিলাচ্ছেন জাকির

গাছ ছোট, কিন্তু ফলন প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দিনাজপুরের জাকির হোসেনের বাগানে সৌদি আরবের খেজুরের এমন ফলন সাড়া ফেলেছে সমকাল

 আজিজুল হক সরকার, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৪ | ০০:০৭

জীবনের দীর্ঘ সময় মধ্যপ্রাচ্যে কাটিয়েছেন জাকির হোসেন। কাজ করেছেন কুয়েত ও সৌদি আরবে। দুই দশকের প্রবাস জীবনে অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি আয়ত্ত করেছেন মরুর ফল চাষ পদ্ধতিও। ফেরার সময় এনেছেন বীজ। তা দিয়ে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর পৌর এলাকায় স্বজন পুকুর গ্রামের বাড়িতে চারা উৎপাদনে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন এই প্রবাসী। এখন সৌদি খেজুরের মিষ্টতা বিলাচ্ছেন আশপাশের জেলায়।

মরুর দেশ সৌদির খেজুর চাষের সঙ্গে চারা বিক্রি করছেন জাকির। ২০ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলক ১৯টি চারা রোপণ করে আশানুরূপ ফলন পান। কয়েক বছরেই তাঁর বাগান দুই একর ছাড়িয়েছে। তাঁর দেখাদেখি বাগান করছেন আশপাশের অনেকেই। চারা কেনার জন্য দিয়ে রাখছেন আগাম ক্রয় চাহিদা। সৌদি খেজুরের খবর পেয়ে বাগান দেখতে ভিড় করছেন প্রতিবেশীসহ দূর-দূরান্তের মানুষ। অনেকে খেয়ে মরুর ফলের স্বাদ নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে তিনি দেড় হাজার চারা বিক্রি করেই আয় করেছেন ১৫ লক্ষাধিক টাকা। 

জানা যায়, একবার বাড়ি ফেরার সময় ১২ কেজি পাকা খেজুর আনেন জাকির। সেগুলো চারা বানিয়ে নিজে বাগান করেন। তাঁর বাগানে রয়েছে আজওয়া, মরিয়ম, খলিজি, মেডজুল, বারহি ও আম্বার জাতের খেজুর গাছ। এগুলোর বয়স চার থেকে ছয় বছর। ২০২২ সালে তাঁর বাগানে প্রথম তিনটি গাছে ফল আসে। পাশাপাশি দেড় একর জমিতে রোপণ করেছেন ড্রাগন, আমড়া, কমলা, নারিকেল, বারোমাসি কাঁঠাল, আঙুর ও লেবুর গাছ। 

উদ্যোক্তা জাকির বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে থাকা অবস্থায় স্বপ্ন দেখতাম মরুর খেজুর দেশের মাটিতে চাষ করার। সেই চিন্তা থেকে পরীক্ষামূলকভাবেই খেজুর এনে চারা তৈরি করি। ইউটিউবের আরাবি চ্যানেল দেখে গাছের পরিচর্যা করতে থাকি। এক পর্যায়ে সাফল্য আসে। তিনটি গাছে ফল ধরলে সেগুলো দিয়ে আবারও চারা করি। এ বছর ৯টি গাছে ফল এসেছে। এর মধ্যে একটি গাছে ৯ কাঁদিতে (গোছায়) ১০০ কেজি খেজুর হয়। কেজিতে ৫০টির মতো ওঠে।’
জাকির জানান, খেজুর থেকে লাগানো চারা হতে সময় লাগে ১৮ মাস থেকে দু’বছর। বাগান করার জন্য একটু উঁচু জমি প্রয়োজন। চারা রোপণের কয়েক বছরের মধ্যে ফল আসে। প্রতিটি চারা বিক্রি হচ্ছে হাজার টাকার ওপরে। ঢাকা, লালমনিরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রয় চাহিদা আসছে। গাছগুলো ৭০-৮০ বছর ধরে ফল দেয়। জাকিরের বাগানে উৎপাদিত খেজুর বিক্রি হয় ৫০০ থেকে সাড়ে ৬০০ টাকা কেজিতে। 

চারা কিনতে আসা মাস্টার সানাউল্লা জানান, সৌদি খেজুর বাগান দেখতে এসে তাঁর এত ভালো লেগেছে যে, চারা না কিনে ফিরতে চাননি। বাড়িতে একটি গাছ থাকলেই ৭০-৮০ বছর ফল পাওয়া যাবে।
প্রতিবেশী আবদুল আলীম, প্রভাষক আলমগীর হোসেন জনি, ভেন্ডার আহসান হাবীব বলেন, ‘বাড়ির কাছেই সৌদি খেজুর চাষ হবে– তা কখনও কল্পনায় ছিল না। নিজেরা এর স্বাদ নিয়েছি, চারা 
নিয়ে বাড়িতে রোপণ করছি। এত দর্শনার্থী দেখেও আনন্দ পাচ্ছি।’
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিল্টন বলেন, দীর্ঘ প্রবাস জীবনে জাকির নিজের জন্য অর্থ উপার্জন করেছেন। সঙ্গে এনেছেন অর্থকরী ফল চাষের জ্ঞান। এখন দিনাজপুরেই সৌদি খেজুর পাওয়া যায়– এটা ভাবতেই ভালো লাগছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, ‘চাল-লিচুতে ভরপুর, জেলার নাম দিনাজপুর’– এই পরিচয় যুগ যুগ ধরে বহন করছে দিনাজপুর। তবে প্রথম সৌদির খেজুর চাষ করেছেন জাকির। তাঁর হাত ধরে ফল-ফসলে আরও সমৃদ্ধ হলো এই জেলা। 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দিনাজপুরের উপপরিচালক মো. নূরুজ্জামান বলেন, মরু অঞ্চলের ফল দিনাজপুরের মাটিতে সফলভাবে ফলিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন প্রবাসী জাকির হোসেন। খেজুরগুলো বিলিয়ে দিচ্ছেন আশপাশের জেলায়ও। কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তাঁকে প্রয়োজনীয় সব সহায়তা করা হবে।
 

আরও পড়ুন

×