ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

ভুয়া বিল-ভাউচারে ৬০ লাখ টাকা লোপাট

ভুয়া বিল-ভাউচারে ৬০  লাখ টাকা লোপাট

.

এ কে এস রোকন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৪ | ০১:৪৫

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল পৌরসভা গঠিত হয় ২০০৪ সালে। তখন নির্মাণ করা হয় একটি দ্বিতল ভবন। পরে ভবনটি সম্প্রসারণে ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ পায় পৌর প্রশাসন। ২০১৬ সালে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রশিদ খান ঝালু দ্বিতীয় দফায় মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চার কিস্তিতে ওই টাকা পান। প্রতি কিস্তি অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার শর্ত হিসেবে কাজের অগ্রগতি জানানোর নির্দেশ ছিল। কিন্তু মেয়র ভুয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে পুরো টাকাই তুলে নেন। তবে মেয়র ঝালুর দাবি সব টাকা আছে, যথাসময়ে কাজ শুরু হবে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পৌরসভা-২ শাখা ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেট (থোক বরাদ্দ) থেকে নাচোল পৌরসভা ভবন সম্প্রসারণের জন্য ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। পৌরসভার উন্নয়ন সহায়তা খাতে থোক বরাদ্দ বাবদ সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজের অংশ হিসেবে সারাদেশের নির্বাচিত পৌরসভাগুলোকে ৪৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে নাচোল পৌরসভা বরাদ্দ পায় ৬০ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের মে মাসে ১০ লাখ ও নভেম্বরে ২৫ লাখ টাকা; ২০১৯ সালের মে মাসে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও এপ্রিলে  ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু পৌর মেয়র আব্দুর রশিদ পৌর ভবন নির্মাণ না করে ভুয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে পুরো টাকা তুলে নেন। এমনকি এ তথ্য কাউন্সিলরদের কাছে গোপন করেন তিনি।
কাউন্সিলর মতিউর রহমান বলেন, ‘মেয়র একবার জানিয়েছিলেন, ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। তবে কী কাজে এসেছে, তা স্পষ্ট করেননি। সে সময়ে কিছু টাকা কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হয়েছিল। বাকি টাকা মেয়র কী করেছেন, তা আমি বলতে পারব না।’ কোনো ভবন নির্মাণ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, পৌরসভা নির্মাণের পর নতুন করে কোনো ভবন নির্মাণ হয়নি।

আরেক কাউন্সিলর মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ২০১৬ সাল থেকে কাউন্সিলর হিসেবে আছি। মেয়র কোনো বরাদ্দ বা কাজের বিষয়ে আমাদের বলেন না। তিনি একাই সবকিছু করেন। যখন পিডি পরিদর্শনে আসেন তখন মেয়র আমাদের খালি হ্যাঁ বলতে বলেন। ভবন নির্মাণের বরাদ্দের বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। পৌরসভায় তাঁর একক রাজত্ব। নিয়োগ বাণিজ্য, ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে টাকা লোপাট করেছেন মেয়র।’
জানা গেল, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ায় মেয়র ঝালুর অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো কর্মচারী কিংবা কাউন্সিলর ভয়ে মুখ খোলেন না। এ বিষয়ে অভিযুক্ত মেয়র বলেন, ভবন নির্মাণে বরাদ্দ এসেছিল। নির্মাণকাজ এ বছর শুরু হবে। তাঁর দাবি, তিনি কোনো অনিয়ম করেননি। কাউন্সিলরদের নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে পৌরসভার কার্যক্রম চালান। তবে ভবন নির্মাণের মেয়াদ ২০১৯ সালের ৩০ জুন শেষ হলেও কাজ করেননি কেন জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন।   
তথ্য অধিকার আইনে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য জানতে চাইলে পৌরসভার প্যাডে স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে মেয়র জানান, সংশ্লিষ্ট খাতের টাকায় পৌর ভবন নির্মাণ করা হয়নি। যেহেতু নির্মাণ হয়নি, সেহেতু ব্যয়ের পরিমাণ বা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম প্রযোজ্য নয়।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব দেবেন্দ্র নাথ ওঁরাও বলেন, বিষয়টি জানা নেই। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন

×