সিলেটে ৮৩৫টি গ্রাম প্লাবিত পানিবন্দি ৮ লাখ মানুষ

বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া ঘরে শিশু সন্তানদের নিয়ে বসবাস করা একটি পরিবার। মঙ্গলবার সিলেট নগরীর তেররতন এলাকা থেকে তোলা সমকাল
সিলেট ব্যুরো
প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৪ | ০০:২৯
সিলেটে ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় নগরীর উপশহর এলাকার তেররতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে পরিবারসহ ঠাঁই নিয়েছিলেন স্থানীয় কলোনির বাসিন্দা আছিয়া বেগম। এবার বন্যা এখনও অত ভয়ংকর হয়ে না উঠলেও উপশহর এলাকার পরিস্থিতি তাঁকে একই আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বাধ্য করেছে। শুধু আছিয়া নন, তাঁর মতো একই কলোনির আরও ২০-২২ জনকে গতকাল মঙ্গলবার ওই আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করতে দেখা গেছে। আশ্রিতরা বলছেন, ২০২২ সালের বন্যায় তেররতন স্কুলের আশ্রয়কেন্দ্রে তিলধারণের ঠাঁই ছিল না। চলমান বন্যার পানি আরও বাড়লে এবারও একই রকম পরিস্থিতি হতে পারে। তেররতন কেন্দ্রের মতো নগরীর আরও ১১টি আশ্রয়কেন্দ্রে বর্তমানে হাজার পাঁচেক বানভাসি মানুষ ঠাঁই নিয়েছেন।
জানা গেছে, বন্যায় সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় বর্তমানে মোট ৮৩৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গোটা জেলায় প্রায় ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছে। তবে এখনও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় যেতে শুরু করেনি মানুষ। জেলা প্রশাসনের গতকালের তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত সাড়ে ৬ হাজারের মতো মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন।
গতকাল নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পানি কিছুটা নেমেছে। তবে সুরমা নদীর পানি প্রায় একই অবস্থানে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বৃষ্টি কমায় সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর অনেক পয়েন্টে পানি কমেছে। তবে কানাইঘাট, অমলশীদ ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়েই পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গতকালের তথ্য বলছে, সিলেট সিটি করপোরেশনসহ সাত উপজেলার ৬ হাজার ৫৬৮ জন আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন। এর মধ্যে সিলেট শহরে সবচেয়ে বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে গেছেন। জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, জেলার ৭ লাখ ৩৯ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত। প্রতিটি উপজেলায় পৃথক টিম কাজ করছে। বন্যার্তদের মধ্যে রান্না করা খাবারসহ শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
এদিকে বন্যাকবলিত মানুষের দুর্ভোগের সঙ্গে ভোগান্তি বাড়ছে যাতায়াতেও। এরই মধ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের কাঁচা-পাকা মিলিয়ে প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি জানান, পৌর সদরের ছিটা ফুলবাড়ী ও ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ পানিবন্দি আছেন। পৌর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের নিজগঞ্জ, পশ্চিম দাড়িপাতনসহ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে বন্যা পরিস্থিতির মধ্যেই আজ বুধবার কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে দুটি উপজেলাই বন্যা আক্রান্ত হওয়ায় ভোটার উপস্থিতি নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। স্থানীয় প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কেন্দ্রে যেতে নৌকার ব্যবস্থা করেছে। জকিগঞ্জ ইউএনও আফসানা তাসলিম বলেন, আমাদের ভোটের প্রস্তুতি আছে।
সিলেটের জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বলেন, জকিগঞ্জ পাঁচটি এবং কানাইঘাট উপজেলার চারটি কেন্দ্র প্লাবিত হওয়ায় বিকল্প কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
- বিষয় :
- পানির দাম