নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থক
কামারখন্দ উপজেলা নির্বাচন

মাসুদ রানা
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৪ | ১৭:১৪ | আপডেট: ০৬ জুন ২০২৪ | ২০:১৯
সিরাজগঞ্জের কামাখন্দ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় মাসুদ রানা (৪৫) নামে একজন নিহত হয়েছেন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে বুধবার রাত সোয়া ১২টার দিকে তিনি মারা যান। মাসুদ রানা কামারখন্দের শালবরিশার বিকেইউ উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক। একইসঙ্গে তিনি দৈনিক ‘সময়ের কাগজ’ পত্রিকার কামারখন্দ উপজেলা ফটো জার্নালিস্টও ছিলেন। তিনি উপজেলার রায়দৌলতপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘বুধবার রাত ১২টার দিকে জরুরি বিভাগে আনার পর মাসুদ রানাকে মৃত হিসেবে পাওয়া যায়। তার শরীরে বেশ কিছু মারধরের চিহ্ন রয়েছে। মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।’
জানা গেছে, চশমা প্রতীকের পরাজিত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সেলিম রেজার সমর্থক ছিলেন মাসুদ রানা। প্রতিপক্ষ হাফিজুর রহমানের সমর্থকদের মারধরে তিনি আহত হন। এ সময় আরও মারধরের শিকার হয়েছেন তার সহকর্মী একই পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি বেলকুচির ভাঙ্গাবাড়ির আরিফুল ইসলাম প্রিন্স ও কামারখন্দ উপজেলা প্রতিনিধি শিশির আকন্দ। তারা দু’জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
নিহতের স্ত্রী নাজমা খাতুন জানান, তার স্বামী সেলিম রেজার সমর্থক ছিলেন। রায় দৌলতপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানের স্বজনরা তালা প্রতীকের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হাফিজুর রহমানের সমর্থক ছিলেন। ফলাফল ঘোষণার পর বুধবার রাত ১১টার দিকে আমার স্বামী এবং সহকর্মী শিশির ও প্রিন্সকে নিয়ে তিনজন মোটরসাইকেলে ফিরছিলেন। লুৎফর রহমানের লোকজন বলরামপুরবাজারে তাদের গতি রোধ করে। আমার স্বামী হার্টের রোগী, বাইপাস সার্জারি ছিল। প্রতিপক্ষরা তার বুকে আঘাত করা মাত্র অসুস্থ হন। স্থানীয় লোকজন তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান তিনি। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক শিশির বলেন, ‘ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাফিজুর রহমানের সমর্থক রায় দৌলতপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানের লোকজন আমাদের আচমকা মারধর করে। সহকর্মী মাসুদ রানা আহত হয়ে মারা যান। ঘটনার পর মাসুদ রানার স্ত্রী মামলার প্রস্তুতি নিলেও লুৎফর রহমানের পক্ষ থেকে তাকে আসামি না করতে সামাজিকভাবে চাপ প্রয়োগ করছে।’
কামারখন্দ থানার ওসি রেজাউল বলেন, ‘প্রতিপক্ষ লোকজনের আঘাতে শিক্ষক-ফটোজার্নালিষ্ট মাসুদ রানা নিহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এ ঘটনায় তার স্ত্রী মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।’
রায়দৌলতপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি লুৎফর রহমান বলেন, ‘মাসুদ রানা হার্টের রোগী ছিলেন। বাইপাস সার্জারি থাকা সত্ত্বেও তিনি দিনভর ভোটকেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ করেছেন। রাতে বাড়ি ফেরার পথে বলরামপুর বাজারে তাহের মেম্বারসহ স্থানীয়দের সামনে স্ট্রোক করে মারা গেছেন শুনেছি। আমার ভাই আব্দুস সামাদ সরকারি দলের সমর্থক হলেও আমার দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। মাসুদ রানার ঘটনা নিয়ে আমাদের রাজনৈতিকভাবে হেয় করার অপচেষ্টা চলছে।’
চশমা প্রতীকে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সেলিম রেজা বলেন, ‘জয়-পরাজয়ের প্রতিহিংসার জেরে মাসুদ রানাকে মারধর করেন তালা মার্কার সমর্থক সাবেক চেয়ারম্যান লুৎফরের আত্মীয়-স্বজন। প্রতক্ষ্যদর্শীরা দেখেছেন। মারধরে আহত হয়ে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান মাসুদ রানা।’
তালা মার্কার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হাফিজুর বলেন, ‘শুনেছি এক শিক্ষক স্ট্রোক করে মারা গেছেন। আমার তো কোনো কর্মী বা সমর্থকই নেই। থাকলে তো আমিই বিজয়ী হতাম।’
- বিষয় :
- নির্বাচনী সহিংসতা
- নিহত