ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

যোগ দিয়েই বদলির চেষ্টায় থাকেন চিকিৎসকরা

যোগ দিয়েই বদলির চেষ্টায় থাকেন চিকিৎসকরা

ফাইল ছবি

এ মান্নান আকন্দ, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২৪ | ০৪:৪৯ | আপডেট: ০৯ জুন ২০২৪ | ১১:০০

তীব্র জনবল সংকটে ভুগছে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো। চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারী এমনকি পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অধিকাংশ পদ শূন্য। অস্ত্রোপচার কক্ষ থাকলেও এ সুবিধা পাচ্ছেন না রোগীরা। জরুরি প্রয়োজনে বেশি টাকা খরচ করে জেলা শহরের বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে গিয়ে অস্ত্রোপচার করাতে হচ্ছে। ওয়ার্ডগুলো অপরিষ্কার, শৌচাগার ব্যবহারের অনুপযোগী। 

কারণ হিসেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জনবল সংকট আর স্বাস্থ্য সহকারী অবসরে যাওয়ার কথা বললেও সংশ্লিষ্টদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পৌর মেয়র আব্দুর রশিদ রেজা সরকার ডাবলু। তাঁর ভাষ্য, বিধি অনুযায়ী একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা যোগ দেওয়ার পর তিন বছর উপজেলায় থাকবেন। কিন্তু প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুযোগ না থাকায় তিন থেকে চার মাসের বেশি অবস্থান করেন না। যোগ দিয়েই বদলির জন্য তদবির শুরু করেন। এক বছরে দু’জন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এসেছিলেন। দু’জনেই সার্জারি বিভাগের। সুবিধা করতে না পেরে তারা বদলি নিয়ে চলে গেছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ১৫টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পদের সংখ্যা ২৬১। শূন্য পদ রয়েছে ১৩২টি। এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭৬ পদের মধ্যে শূন্য ৪৪টি। প্রতিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন করে মেডিকেল অফিসার, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন করে সার্জনের পদ রয়েছে। সেখানে একজনও মেডিকেল অফিসার বা সার্জন নেই। একজন স্বাস্থ্য সহকারী একাই একাধিক গ্রামের স্বাস্থ্যসেবার কাজ করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। অবসর ও বদলিজনিত কারণে পদগুলো শূন্য রয়েছে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।  

সুত্র আরও জানায়, গত পাঁচ বছরে পাঁচজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা যোগদান করেই এক বছরের মধ্যে বদলি হন। তারা হলেন– মো. ইয়াকুব আলী মোড়ল, আশরাফুল ইসলাম সরকার, আবুল ফাত্তাহ, সাহিয্যদ মুহাম্মদ আমরুল্লাহ ও কাজী মো. আবু আহসান। 

উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাজেদুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অপারেশন থিয়েটার থাকলেও চিকিৎসক নেই। পড়ে থেকে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দুটি অ্যাম্বুলেন্সের একটি নষ্ট। চালক না থাকায় অন্যটিও পড়ে আছে এক বছর ধরে। এসব কারণে দরিদ্র উপজেলাবাসী পল্লি ও হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে আর বিত্তশালীরা ছুটছেন জেলা ও বিভাগীয় শহরে। আন্দোলন করেও কোনো কাজ হচ্ছে না।

সরেজমিন ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, রোগীদের দীর্ঘ সারি। অর্ধেক জনবল দিয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা। রোগী ফরমান আলী জানান, এক বছর ধরে অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ। একটি নলকূপ থাকলেও সেটি নষ্ট। জেনারেটর চালু করা হয় না। বিদ্যুৎ গেলে সৃষ্টি হয় ভূতুড়ে পরিবেশ। খাবারের মান একেবারে নিম্ন। প্রায় সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। 

একই অবস্থা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতেও। ছাপড়হাটী ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা সুমন মিয়া জানান, এখানে একজন মেডিকেল অফিসারের পদ রয়েছে। কোনো দিন তাঁকে দেখেননি। মাঝে মাঝে ওয়ার্ড বয়, পিয়ন ওষুধ বিতরণ করেন। একই কথা বলেন কাপাসিয়ার চর কালাইসোতা গ্রামের আনছার আলী। 

ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিদর্শক আলমগীর সরকার জানান, অনেক স্বাস্থ্য সহকারী অবসরে গেছেন। নতুন করে জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় অসংখ্য পদ শূন্য। নিয়োগের বিষয়টি ওপর মহলের ব্যাপার। এখানে তাদের কিছু করার নেই।   

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু আহসান জানান, তিনি সম্প্রতি যোগদান করেছেন। এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না। জেনে সমস্যা সমাধান করবেন বলে আশ্বাস দেন। 

গাইবান্ধা সিভিল সার্জন ডাক্তার কানিজ সাবিহা বলেন, সারাদেশেই জনবল সংকট। এখানে আমার কিছু করার নেই। বিষয়গুলো নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

×