ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ছাত্রলীগ কর্মী ইজাজ হত্যা

গুলি করার সময় সঙ্গে কে ছিল, জানাল ছাত্রলীগ নেতা জয়

গুলি করার সময় সঙ্গে কে ছিল, জানাল ছাত্রলীগ নেতা জয়

ছবি- সমকাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২৪ | ১৯:২৩

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দিন গুলি করে ছাত্রলীগ কর্মী আশরাফুল রহমান ইজাজ হত্যার ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবাবন্দি দিয়েছে ছাত্রলীগ নেতা হাসান আল ফারাবী জয়। শনিবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সামিউল আলমের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় সে। এ সময় হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকারের পাশাপাশি তার সঙ্গীদের নামও জানিয়েছে জয়।

হাসান আল ফারাবী জয় জেলা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহসভাপতি। তার জবানবন্দি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালত পরিদর্শক কাজী দিদারুল আলম।

এর আগে গত শুক্রবার ভোরে নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদিন রাতে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে সদর মডেল থানায় আরেকটি মামলা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ফারাবী জয় বলেছে, আধিপত্য বিস্তারের জেরে সৃষ্ট পূর্ববিরোধ থেকে ইজাজকে গুলি করে হত্যা করেছে। এ সময় তার সঙ্গে কারা কারা ছিল, তাদের নামও জানিয়েছে সে।

দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষিত পরিবারের সন্তান ছাত্রলীগ নেতা ফারাবী জয়। পৌর এলাকার কাজীপাড়ায় বসবাসকালে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক এক সাংগঠনিক সম্পাদকের হাত ধরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে হাতেখড়ি হয় তার। বাবা শিক্ষক। বোন পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফারাবী জয় সম্প্রতি চট্টগ্রাম কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর পরীক্ষা দিয়েছে বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, কাজীপাড়া এলাকার আরেক সশস্ত্র ক্যাডারের শিষ্য ছিল সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। কলেজপাড়ার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ হিসেবে পরিচিত জালাল হোসেন খোকার অনুসারী হলেও সাবেক নেতার সঙ্গেও সম্পর্ক ছিল জয়ের। সম্প্রতি শহরের পাইকপাড়ায় স্থানীয় যুবকদের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনায় সৃষ্ট বিরোধে ছাত্রলীগের সাবেক নেতার সঙ্গে সেও এক পক্ষের হয়ে সেখানে যায়। তবে সেখানে শহরের পরিচিত বিশিষ্টজনকে দেখে তারা ফিরে আসে। পরে ইজাজ হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি কাজীপাড়া থেকে খোকা সংগ্রহ করে বলে সূত্র জানিয়েছে।

জেলা শহরের কলেজপাড়ার উত্তরাংশে খোকার এমন কর্মকাণ্ডের কথা স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে নারাজ। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শিক্ষিত ব্যক্তি ও প্রবাসীদের এ এলাকায় জমি বেচাকেনা ও বাড়ি নির্মাণ করতে গেলে খোকাকে চাঁদা দিতে হয় বলে তারা জানিয়েছেন। নির্মাণসামগ্রীও তার লোকদের কাছ থেকে চড়া দামে কিনতে বাধ্য করা হয়। স্থানীয়রা বলছে, এসব অপকর্মের সহযোগী ছিল ফারাবী জয়।

জালাল হোসেন খোকার বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টাসহ একাধিক মামলা রয়েছে জানিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ওসি মো. আসলাম হোসেন বলেন, ফারাবী জয়ের বিরুদ্ধেও একাধিক মারামারির মামলা আছে। ইজাজ হত্যায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

গত বুধবার সন্ধ্যায় সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদৎ হোসেন শোভনের পক্ষে আনন্দ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের কলেজপাড়ার খান টাওয়ারের কাছে এলে তাঁর সমর্থক ফারাবী জয় গুলি করে ইজাজের মৃত্যু নিশ্চিতের পর চলে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

এ ঘটনায় ইজাজের বাবা আমিনুর রহমান ১৬ জনকে আসামি করে বৃহস্পতিবার রাতে হত্যা মামলা করেছেন। এ মামলার ২ নম্বর আসামি ফারাবী জয়কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে ১ নম্বর আসামি জালাল হোসেন খোকাসহ অন্য আসামিরা অধরা রয়েছে।

আরও পড়ুন

×