ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

সুনামগঞ্জে বন্যা

‘পুরি’র জামাইয়েরে লইয়া আইয়া পেক টানতাছি’

‘পুরি’র জামাইয়েরে লইয়া আইয়া পেক টানতাছি’

বন্যয় ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ি। ছবি: সমকাল

পঙ্কজ দে, সুনামগঞ্জ

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৪ | ১৭:৫৭

বন্যার পানি নেমে গেলেও বানভাসি নিম্ন আয়ের মানুষের অনেকেই ফিরতে পারছেন না ঘরে। ঘর থেকে পানি সরলেও কাঁদা-দুর্গন্ধসহ বন্যার ক্ষত দূর করার লড়াই করছেন তাঁরা। 

রোববার সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ৩৫ পরিবারের মধ্যে মাত্র চারটি পরিবার বাড়ি ফিরেছে। অন্যদের কারও ঘরে এখনও পানি রয়েছে। কেউবা ঘরের কাঁদা সরিয়ে (পেক কাইচ্ছা) প্রাণপণ চেষ্টা করছেন ঘরে ফিরতে। তাদের একজন মর্জিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রে আছি এখনও, পরিবারের ১০ জন মানুষ, সকালে আইছি (এসেছি), ঘরের পেক কাইচ্ছা পালানির (সরানোর) লাগি। হাটুইম্মা গারে (হাঁটু সমান কাঁদা) কাইচ্ছা না পালাইলে ১৫ দিনেও ঘরও আওন যাইতোনায় (আসা যাবে না)। দুই বছর আগে একবার ঘর পরিগেছিল, ইবারও পরিবার, ইলাখান (এইরকম) কেমনে বাঁচতাম।’

কেবল মর্জিনা বেগম নন, গ্রামের ছালেহা বেগমেরও এমন চেষ্টা ঘরে ফেরার। তিনি বলেন, ‘পুরি’র (মেয়ের) জামাইয়েরে লইয়া আইয়া পেক টানতাছি (কাঁদা সরাচ্ছি), হিকানোতো (আশ্রয়কেন্দ্রে) থাকন যাইতোনায় (থাকা যাবে না)।’

শামীম তার স্ত্রী আয়েশাকে সঙ্গে নিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরের টিউবওয়েল থেকে নৌকায় করে পানি নিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, টিউবওয়েল পানির নিচে, এজন্য ওই টিউবওয়েলের পানি পান করছেন না।

কাওছার ভুইয়া বলেন, ৩৫ পরিবারের মধ্যে মাত্র চার পরিবার ঘরে ফিরেছে। অন্যদের ঘরে হাঁটু সমান কাঁদা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মনির হোসেন বলেন, ২০২২ সালে এই গ্রামের ৬০ থেকে ৭০ পরিবারের বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এর মধ্যে ৮ পরিবার সরকারি সহায়তার ১০ হাজার করে টাকা পেয়েছিল। এই টাকা দিয়ে ঘর করার মত নয়। তবুও ধার-কর্জ করে তারা বসতঘর নির্মাণ করে দুই বছরও থাকতে পারেনি। এইবারও গ্রামের ২৫০ বাড়ির সবগুলোতে পানি উঠেছে। ৩৫ পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছিল। এদের বেশি ক্ষতি হয়েছে। এখন পর্যন্ত চারটি পরিবার বাড়ি ফিরেছে। অন্যরা ফিরতে পারেনি। আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে উঠেছেন কেউ, কেউবা আশ্রয়কেন্দ্রেই আছে। গ্রামে বিশুদ্ধ পানিরও সমস্যা আছে। বেশিরভাগ টিউবওয়েল ডুবে গেছে। এখনও আছে পানির নিচে। এছাড়া টিউবওয়েলগুলোতে মোটর দিয়ে বিদ্যুতের সাহায্যে পানি ওঠানো হয়। বিদ্যুৎ না থাকলে পানি পাওয়া যায় না। ঈদের দিন বানের পানি এসেছিল। ওইদিন বিদ্যুৎ ছিল না। পানির জন্য হাহাকার ছিল গ্রামে। তিনি মনে করে গ্রামে কয়েকটি চাপ টিউবওয়েল থাকা জরুরি।

সরেজমিনে লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে বন্যার ক্ষত ও বাসিন্দাদের কষ্ট চোখে পড়েছে। এর চেয়েও খারাপ অবস্থা সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের গুয়াছুঁড়া, রৌযা, মৌকলা, ইছাগরি, আব্দুল্লাপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে। ধনীরা কোনোভাবে ঘুরে দাঁড়ালেও নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছেন মহাবিপাকে। তারা না পারছেন বাড়ি ফিরতে, না থাকতে পারবেন আশ্রয়কেন্দ্রে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানিয়েছেন, রোববার বিকেল পর্যন্ত বন্যার পানি সরে যাওয়ায় ৮ হাজার বন্যার্ত মানুষ নিজ নিজ বাড়ি ফিরেছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন ১২ হাজার মানুষ।

আরও পড়ুন

×