কারাগার থেকে হত্যা মামলার আসামির ছবি ফেসবুকে, কারারক্ষী বরখাস্ত

রাব্বীর এই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন পরিবারের সদস্যরা। ছবি-সংগৃহীত
কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪ | ০৯:৫৮ | আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪ | ১০:৩৫
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে একটি হত্যা মামলায় বন্দি ফজলে রাব্বী নামের এক আসামির ছবি তুলে স্বজনদের কাছে পাঠানোর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এক কারারক্ষীকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই কারারক্ষীর নাম ইসমাইল হোসেন তুহিন। তাঁর বাড়ি বান্দরবান জেলার লামা উপজেলায় চাপাতলী গ্রামে।
বুধবার সমকালকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন।
তিনি জানান, কারাগারে মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ। ওই কারারক্ষী কারা আইন ভঙ্গ করার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
এর আগে কারাগারে তোলা হত্যা মামলার ওই আসামির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই আসামির স্বজনরা গান যুক্ত করে ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। হত্যা মামলাটির বাদীপক্ষের অভিযোগ, তাঁদের ভয় দেখানোর জন্য এবং ক্ষমতা প্রকাশ করতেই এ কাজ করেছেন আসামির স্বজনরা। এ নিয়ে মঙ্গলবার দৈনিক সমকালে সংবাদ প্রকাশিত হয়। একই ভবনে রাব্বীর পরিবার ও বরখাস্তকৃত কারারক্ষীর পরিবার ভাড়া থাকায় সখ্যতা থেকে কারাগারের ভেতরের ছবি রাব্বীর পরিবারকে সরবরাহ করা হয় বলে কারা সূত্রে জানা গেছে।
গত ১৫ মার্চ শহরতলির শাসনগাছায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন শাসনগাছা এলাকার জামিল হাসান অর্ণব (২৬)। নিহত অর্ণব কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজর স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এ ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত অর্ণবের মা ঝর্ণা আক্তার। এতে ফজলে রাব্বীকে (৩০) প্রধান আসামি করে ২৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
গ্রেপ্তার হয়ে গত ১৭ মার্চ থেকে এ হত্যা মামলার প্রধান আসামি ফজলে রাব্বী (৩০) কুমিল্লা কারাগারে আছেন। তাঁর ছবি তুলে স্বজনদের কাছে পাঠিয়েছেন কারারক্ষী ইসমাইল হোসেন। স্থানীয়রা জানান, বরখাস্তকৃত ওই কারারক্ষী শাসনগাছার উত্তরা আবাসিক এলাকায় ভাড়া থাকেন। বাড়ি নির্মাণের কারণে একই ভবনে ভাড়া থাকেন রাব্বীর পরিবার। এখানেই কারারক্ষীর সঙ্গে কারাগারে আটক রাব্বীর পরিবারের পরিচয় হয় এবং কারাগার থেকে ছবি তুলে এনে সরবরাহ করা হয়।
কারা সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে চাকরিতে যোগ দেওয়া তুহিন ২০২২ সালে কুমিল্লা কারাগারে বদলি হয়ে আসেন। ঈদের আগের দিন ১৬ জুন কারারক্ষী ইসমাইল হোসেন জেলারের বাসভবনের ছাদে দায়িত্ব পালনকালে মুঠোফোনে আসামি ফজলে রাব্বীর কয়েকটি ছবি পাঠান তাঁর স্বজনদের কাছে। পরে ওই ছবি ও ভিডিও আসামি রাব্বীর ভাই এ কে আল আমিন খানের আইডি থেকে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়। এই ছবির সঙ্গে গান জুড়ে দিয়ে ক্যাপসনে লেখা হয়, ভাই সময় আসবে ইনশাআল্লাহ। এমন ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নিহত অর্ণবের পরিবার।’
এদিকে কঠোর নিরাপত্তার মাঝে কারাগার থেকে আসামির ছবি বাইরে এনে সেটা দিয়ে ভয়ভীতি দেখানোয় কারা অভ্যন্তরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ব্যাপারে সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন সমকালকে বলেন, ‘এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কারাগারের নিরাপত্তা জোরদার করা আছে। এটা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই।’
এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মু মুশফিকুর রহমান জানান, তিনি কারাগার পরিদর্শন করেছেন। পুরো ঘটনা শুনেছেন। অভিযুক্ত কারারক্ষীকে বরখাস্ত করার পাশাপাশি কারাগারের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।