ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

চলনবিলে কমেছে নৌকার চাহিদা, বিক্রিতেও ভাটা

চলনবিলে কমেছে নৌকার চাহিদা, বিক্রিতেও ভাটা

তাড়াশের মান্নান নগর এলাকায় নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত এক কারিগর সমকাল

এম আতিকুল ইসলাম বুলবুল, তাড়াশ      (সিরাজগঞ্জ)

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪ | ০০:০৯

আবহাওয়া ও জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে দেড় থেকে দুই দশক হলো চলনবিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ২২টি নদ-নদী এবং অসংখ্য খাল, বিল ও জলাশয় বর্ষা মৌসুমেও অনেক সময় পানিশূন্য থাকে। এতে এলাকায় নানা রকম নৌকা তৈরি ও বিক্রির বনেদি ইতিহাসে এখন ভাটার টান। কথাগুলো বলছিলেন তাড়াশের মাঝিড়া গ্রামের প্রবীণ শিক্ষক মো. আব্দুল জাব্বার খন্দকার (৮৮)।
এবারও বর্ষা ঋতুর মাঝামাঝি সময়ে এসে বেড়েছে বৃষ্টিপাত। এর সঙ্গে চলনবিলে ধীরে হলেও পানি বাড়ছে। এ সময়ে বিলের আশেপাশের মানুষের চলাচলের প্রধান বাহন হয় নৌকা। ফলে বজরা, পানসি, গহনা, ছিপ, ডিঙি, ভুড্ডি, বাইজের নৌকার কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়েছে। তাদের কাছ থেকে নৌকা কিনে নিচ্ছেন চলনবিলের আশপাশের মানুষ।
কারিগর আজম আলী বলছিলেন, নৌকা তৈরিতে যে পারিশ্রমিক পান, তা বেশ ভালো। তবে আগের মতো কাজ নেই। এ কারণে আয় কমেছে। কয়েক বছর ধরে স্বল্প বন্যায় নৌকার তেমন প্রয়োজন হয় না।
স্থানীয়রা বলছেন, বিল এলাকায় ২০-২৫টি নদীকেন্দ্রিক ব্যবসাকেন্দ্র রয়েছে। আগে পণ্য ও যাত্রী আনা-নেওয়ার কাজে নৌকার ব্যাপক ব্যবহার থাকলেও এখন তা অনেকটাই অতীত। চলনবিল দিয়ে প্রবাহিত গুমানী, নন্দ বুজা, করতোয়াসহ ২২টি নদীর বেশির ভাগই নাব্য হারাতে বসেছে। 

চলনবিল এলাকায় নৌকা তৈরির কারিগর আছেন ২৫০ থেকে ৩০০ জন। তাদের বেশির ভাগই নৌকা তৈরির কাজে নেমে পড়েছেন বলে জানান ধানকুনিয়া বিন্নাবাড়ির মো. বরাত মিস্ত্রি (৬০)।
এদিকে সব ধরনের কাঠের দাম কেবিপ্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। সারি (পাকাপোক্ত) প্রতি কেবি শাল কাঠ ৪ হাজার, কাঁঠাল ৩ হাজার ২০০, দেশি কড়ই ১৪০০ ও আম কাঠ ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ী সাইদুর রহমানের ভাষ্য, বাবলা, শিমুলসহ অন্যান্য কাঠের দামও গত বছরের চেয়ে এবার বেশি।
জানা গেছে, এবার ছোট আকারের ১২ থেকে ১৫ হাত কাঠের নৌকা বানাতে মিস্ত্রি বা কারিগর বাবদ খরচ হচ্ছে সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। আর প্লেন শিট বা স্টিল দিয়ে একই মাপের নৌকা তৈরিতে খরচ হয় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। কাঠ ও স্টিলের ছোট নৌকা বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৫ থেকে ১২ হাজার টাকায়। আর পণ্য ও যাত্রীবাহী বড় নৌকা তৈরিতে ১ লাখ ২৫ থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা খরচ হয়। দামি ও সারি কাঠ দিয়ে তৈরি করলে খরচ আরও বাড়ে।
ভালো স্টিল ও কাঠ দিয়ে বড় নৌকা তৈরিতে খরচ হয় আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা। ৩৫০ থেকে ৫৫০ মণ মালপত্র পরিবহন করা যায়– এমন নৌকা তৈরিতে খরচ ৬ লাখ টাকার বেশি বলে জানান কুন্দইল গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, বিল এলাকায় বড় নৌকা তৈরির কাজ গত কয়েক বছরে অনেক কমেছে।
নৌকার ব্যবসায় প্রায় ২০ বছর ধরে রয়েছেন তাড়াশের নওগাঁ হাটের বিক্রেতা আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, গত বছর নৌকা বিক্রি খুব কম ছিল। তবে এবার বিক্রি বেড়েছে। প্রতি হাটে ৭-৮টি নৌকা বিক্রি হচ্ছে। সামনের হয়তো বেচাকেনা বাড়বে।
নওগাঁ হাটের ইজারাদার আব্দুল হাই চৌধুরী বলেন, প্রত্যন্ত বিল এলাকায় শত শত পাকা, ডুবন্ত সড়কসহ সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করায় সংকুচিত হয়ে গেছে নৌপথ। ক্রমেই কমছে নৌ-চলাচল ও নৌকার ব্যবহার। তার পরও মাঝারি বন্যায়ও নানা প্রয়োজনে নৌকার প্রয়োজন হয়। সে কারণে নৌকা তৈরি ও বিক্রি অব্যাহত আছে।

আরও পড়ুন

×