বিদেশে নির্যাতনের রোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন ৩ ভুক্তভোগী

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ভুক্তভোগী রাজীব, আরিফ ও হাবিব
মাদারীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪ | ২২:৪২ | আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪ | ২২:৪৮
পরিবারের সচ্ছলতা আনতে বিদেশে গিয়েছিলেন মাদারীপুর জেলার ডাসারের তিন যুবক। উড়োজাহাজে ওঠার আগেই দালালদের দিতে হয়েছিল কয়েক লাখ টাকা। ঋণ-ধার করে এ অর্থ জোগাড় করলেও স্বপ্ন ছিল প্রবাসে কর্ম শুরু করার পর একসময় সব দেনা শোধ করে সংসারের চাকায় গতি আনবেন। কিন্তু তা তো দূরের কথা, বিদেশের মাটিতে পা রাখতেই শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। ঘরে আটকে রেখে নির্বিচারে পেটানো হতো। সেই দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করে পাঠানো হতো পরিবারের কাছে। যতক্ষণ চাহিদামতো আরও টাকা না পাঠাত, ততক্ষণ চলত মারধর, দেওয়া হতো না খাবার। সেই নির্যাতনখানা থেকে মুক্তি পেয়ে শনিবার সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী মো. রাজীব, আরিফ ও হাবিব।
ডাসার উপজেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসে নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। এ সময় এই অপকর্মে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
ভুক্তভোগীরা বলেন, রাজৈর থানার বদরপাশা এলাকার মাফিয়া দালাল মিলন মাতুব্বর সহজ-সরল যুবকদের বিদেশে ভালো কাজের প্রলোভন দেখান। যারা তাঁর ফাঁদে পড়ে, তাদের তিনি ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় পাঠান। সেখানে আরও অনেক প্রতারকের সঙ্গে কুমিল্লার লাকসামের মো. শরীফ ও কুড়িগ্রামের জাহিদ হাসান প্রবাসীদের ওপর নির্যাতন চালান। দিনের পর দিন অনাহারে রাখতেন। অনেক সময় তিন দিন পর একটি রুটি ও সামান্য ডাল খেতে দিতেন। ছোট কক্ষে কয়েকজনকে গাদাগাদি করে রাখা হতো। শরীরে ঘা ও চুলকানি হলে ওষুধও দিত না। থেমে থেমে চলত নির্যাতন। এভাবে তিন পরিবারের কাছ থেকে আরও ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ দালাল চক্র। চাহিদামতো টাকা পেয়ে ভুক্তভোগীদের তুলে দেওয়া হয় স্থানীয় পুলিশের হাতে। এর পর নানা আইনি প্রক্রিয়ায় দেশে ফেরার সুযোগ হয়।
বাড়ি ফিরে মিলনসহ তিনজনের নামে গত ৩০ জুন আদালতে মানব পাচার আইনে মামলা করেন তারা। বুধবার মিলনকে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় ডাসার থানা পুলিশ।
ওসি এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, মামলার অপর দুই আসামিকে ধরার জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।
ডাসার ইউএনও কানিজ আফরোজ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে কোনো লিখিত না দিলেও মামলার তথ্যের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয়ভাবে এসব বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
- বিষয় :
- নির্যাতনের অভিযোগ
- মানবপাচার
- মাদারীপুর