ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

খাসজমি দখলে কমছে চারণভূমি

আশঙ্কাজন হারে কমেছে পশু পালন

খাসজমি দখলে কমছে চারণভূমি

মাঠে ঘাস খাচ্ছে কয়েকটি মহিষ। লালপুর উপজেলার বিলমাড়িয়া চরচর

লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪ | ২৩:০৬

এক সময় পদ্মার ভাঙনে নদীতে বিলীন হয় লালপুর উপজেলার বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের নদীতীরবর্তী মানুষের বাড়িঘর ও চাষের জমি। ৩০ বছর পর সেখানে হাজার হাজার বিঘা নিয়ে জেগে উঠে চর। সেই চরে গড়ে উঠে মহিষের চারণভূমি। ক্রমে চর দখল, পুকুর কেটে মাছ চাষে কমে আসছে সেই চারণভূমি। সংকট দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের। কৃষকরা গবাদি পশু পালন নিয়ে পড়েছেন মহাবিপাকে। 

বিলমাড়িয়া ইউনিয়নে চারটি চরে খাসজমি রয়েছে ১ হাজার ৫৯৪ দশমিক ১৫ একর। এর মধ্যে নওসারা সুলতানপুর চরে ৮৩৬ দশমিক ১০ একর, দিয়ারসংকরপুরে ২২০ দশমিক ৭৬ একর, সেকেন্দারপুরে ৩৯ দশমিক ৯৫ একর ও চাকলাবিনোদপুর চরে ৪৯৭ দশমিক ৩৪ একর। এসব জমি অবৈধভাবে একটি চক্র দখল করে রেখেছে বলে জানান বলিমাড়িয়া ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা নিখিল চন্দ্র সূত্রধর। দখলদারদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না এর সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। 
বিলমাড়িয়া ইউনিয়নে ৫ হাজার ৫০৮টা মহিষ, ১৬ হাজার ৩৭৪টি গরু ও ২ হাজার ৮৬৮টি ভেড়া লালনপালন করা হয়। দশ বছর আগে এ সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি ছিল বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ অফিস। 

অভিযোগ রয়েছে, বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের চারণভূমির মাটি ভেকু মেশিন দিয়ে কেটে বিক্রি করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী সেন্টু মোল্লা ও জিয়ারুল। স্থানীয় আদম মোল্লা, মকছেদ মাস্টার, এলাহী প্রামাণিক, ফারুক, সিদ্দিক মণ্ডল, লতিফ মোল্লাসহ এলাকার একাধিক প্রভাবশালী চরের খাসজমি দখল করে নিয়েছেন। সেই জমিতে তাদের কেউ চাষাবাদ করছেন, কেউবা গড়ে তুলেছেন পুকুর। এতে গো-চারণভূমি কমে যাওয়ায় স্থানীয় খামারিরা মহিষ নিয়ে খাদ্যের সন্ধানে চলনবিলসহ বিভিন্ন বিলে পাড়ি জমান। সেখানেও মহিষ হারানোসহ নানা প্রতিকূলতায় পড়তে হচ্ছে তাদের। ফলে মহিষ পালনে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা। 
বিলমাড়িয়া গ্রামের টুটুল আলীর বাপদাদারা মহিষ পালন করেছেন। এক সময় তাদের ৩৫টি মহিষ ছিল। বর্তমানে আছে ১৫টি। চারণভূমি না থাকায় মহিষ পালন কমিয়ে দিয়েছেন। টুটুল আলী বলেন, খাবারের জন্য মহিষ নিয়ে চলনবিলসহ বিভিন্ন বিলে যেতে হয়। সেখানেও চোর-ডাকাতের আতঙ্কে থাকতে হয়। এ জন্য মহিষ পালন কমে গেছে। 

একই এলাকার আল-আমিন সরকারের ৩০টি মহিষ ছিল। এখন আছে ৮টি। তিনি বলেন, ৫ বছর আগেওও এখানকার প্রত্যেক কৃষকের শত শত মহিষ ছিল। বর্তমানে সেই মহিষের সংখ্যা কমে গেছে। কারও ৫টি, কারও ১০টি করে মহিষ আছে। সেগুলোর জন্যও চারণভূমি নেই। সব জায়গা দখল হয়ে গেছে। খাবারের জন্য মহিষ চলনবিলে পাঠাতে হয়।

বিলমাড়িয়া গ্রামের নিরমন কুমার বলেন, এই চরে বাপদাদার ৭০০ বিঘা সম্পত্তি ছিল। পাল ধরা মহিষের খামার ছিল। ভূমিদস্যুরা সব জমি দখল করে নিয়েছে। বলতে গেলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এখন জমি নেই, মহিষের পালও নেই।  

অভিযোগ প্রসঙ্গে মকছেদ মাস্টার বলেন, ‘চরে আমাদের বাপদাদার পৈতৃক জমি আছে। পরে কিছু জমি কিনেছি, বাকি জমি লিজ নিয়েছি। এরপরও অভিযোগ ওঠায় এসব জমি নিয়ে আদালতে রিট করেছি।’ আরেক অভিযুক্ত সিদ্দিক মণ্ডল জানান, নওসারা চরে তাঁর ৪০-৪৫ বিঘা জমি আছে। কোনো জমি অবৈধভাবে দখল করা হয়নি। একই কথা বলেন, ফারুক, লতিফ মোল্লাসহ কয়েকজন দখলদার।

বিলমাড়িয়া গ্রামের সুমিত ঘোষ বলেন, আগে এখানকার মহিষের দুধ দিয়ে ঘি উৎপাদন করা হতো। বর্তমানে মহিষের পালন কমে যাওয়ায় ঘি উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে দুধ সংগ্রহ করতে হয়। এতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আখতার বলেন, খাসজমি দখলের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খামারিরা অভিযোগ দিলে সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

 

আরও পড়ুন

×