ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

দু’দিন ধরে ভারী বর্ষণ

কক্সবাজারে পাহাড় ধসে নারী-শিশুসহ ৩ জনের মৃত্যু

তিন সপ্তাহে প্রাণ গেল ১৭ জনের

কক্সবাজারে পাহাড় ধসে নারী-শিশুসহ ৩ জনের মৃত্যু

ফাইল ছবি

 কক্সবাজার প্রতিনিধি 

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪ | ০০:৫৩

কক্সবাজারে ভারী বৃষ্টির মধ্যে পাহাড় ধসে পৃথক ঘটনায় নারী, শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়া ও এবিসি ঘোনা এবং সদর উপজেলার দক্ষিণ মুহুরিপাড়ায় পাহাড় ধসের এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত তিন সপ্তাহে পাহাড় ধসে ১৭ জনের মৃত্যু হলো।

নিহতরা হলেন– কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ার সিকদার বাজার এলাকার দুবাই প্রবাসী সাইফুল ইসলামের ছেলে নাজমুল হাসান (৫), পার্শ্ববর্তী এবিসি ঘোনার মোহাম্মদ করিমের স্ত্রী জমিলা আক্তার (৩০) ও সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ মুহুরিপাড়ার বজল আহমদের স্ত্রী লায়লা বেগম (৩৫)। 

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, এ নিয়ে গত তিন সপ্তাহে কক্সবাজারে পৃথক পাহাড় ধসে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে এক দিনে ১০ জন নিহত হন।
এ ছাড়া কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি এলাকায় পাহাড় ধসে গতকাল সকাল থেকেই যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। শহর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ধস ও ফাটল দেখা দিয়েছে।
টানা দু’দিনের ভারী বর্ষণে শহরের বিভিন্ন স্থান জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। প্রধান সড়কসহ অন্তত ২০টি উপসড়ক পানিতে ডুবে গেছে। সড়কগুলোয় দিনভর যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। সড়কের দু’পাশে দোকানপাট, অফিস ও বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় দুর্ভোগে পড়েন বাসিন্দারা। হোটেলে আটকা পড়েছেন পর্যটকরা।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান বলেন, বুধবার দুপুর ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, বুধবার সকাল থেকে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থাকা লোকজনকে সরিয়ে আনতে এলাকায় প্রচার চালানো হচ্ছে।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে কক্সবাজার সদর থানার ওসি মো. রকিবুজ্জামান বলেন, বুধবার রাত থেকে কক্সবাজার শহরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে সিকদার বাজার এলাকার সাইফুল ইসলামের বাড়ির ওপর আকস্মিক পাহাড় ধসে পড়ে। এতে মাটির দেয়াল ভেঙে সাইফুলের ঘুমন্ত শিশু চাপা পড়ে। পরে স্থানীয়রা মাটি সরিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সকালেই এবিসি ঘোনার মোহাম্মদ করিমের বাড়ির ওপর পাহাড় ধসে পড়লে তাঁর স্ত্রী মাটিচাপা পড়েন। পরে উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ছাড়া সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ মুহুরিপাড়ায় দুপুরে পাহাড় ধসে লায়লা বেগম নামে এক নারীর মৃত্যু হয়।
জানা যায়, জেলা সদর, উখিয়া, টেকনাফ, রামু, ঈদগাঁও, চকরিয়া, পেকুয়া ও মহেশখালীতে অন্তত ৫ লাখ মানুষ ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। তার পরও এসব এলাকায় বেড়েছে নাগরিক সুবিধা। পাহাড়ে প্রশস্ত সড়কের পাশাপাশি লোকালয়ে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। এতে স্থানীয়দের মাঝে বসতি স্থাপনে আগ্রহ বাড়ছে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের ১ লাখ ২০ হাজার ৫৮৩ একর বনভূমির মধ্যে বড় অংশ দখল হয়ে গেছে। এর মধ্যে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার একর বনভূমিজুড়ে। আশ্রয়শিবিরের আশপাশের পাহাড়েও গড়ে উঠছে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি।

সেভ দ্য কক্সবাজারের সভাপতি আনসার হোসেন বলেন, কক্সবাজারে পাহাড় নিধনের ভয়ানক পরিণতি সবাই অবগত। কিন্তু কোনো সংস্থা কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সতর্ক করে নিয়মিত প্রচার চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসতির তালিকা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত অন্তত ১২ লাখ রোহিঙ্গা উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে বসবাস করছে। এসব ক্যাম্পের মধ্যে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের ৭ থেকে ১১ নম্বর ক্যাম্পে সাড়ে ৫ হাজার বসতঘর পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে। কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

আরও পড়ুন

×