ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

চলনবিলে ভ্রমণের নামে হচ্ছেটা কী

চলনবিলে ভ্রমণের নামে হচ্ছেটা কী

গুরুদাসপুরে চলনবিলের বিলশা পর্যটনকেন্দ্র এলাকায় নৌকায় অশালীন অঙ্গভঙ্গি তরুণদের সমকাল

নাজমুল হাসান, গুরুদাসপুর (নাটোর)

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৪ | ২২:১৪

দেশের সবচেয়ে বড় বিল চলনবিল। এটি নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলাজুড়ে বিস্তৃত। এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ৪৭টি নদী ও খাল। বর্ষায় চলনবিল পানিতে টইটম্বুর থাকায় তৈরি হয় নয়নাভিরাম দৃশ্যের। এসব উপভোগ করতে বিলের বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার দর্শনার্থী ভিড় করেন। তবে নৌকা ভ্রমণের নামে কিছু কিশোর ও তরুণের অশ্লীল কর্মকাণ্ডে বিব্রত হতে হচ্ছে পর্যটকদের। অভিযোগ রয়েছে, জুয়া এবং মাদক সেবনেরও।

এসব কর্মকাণ্ডের কারণে বিপদে পড়ছেন চলনবিলে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা পর্যটকরা। প্রশাসনের টহল ও নজরদারি না থাকায় দিনের পর দিন এমন কর্মকাণ্ডে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। গত শুক্রবার নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চলনবিলের বিলশা পর্যটনকেন্দ্রে গিয়েও এমন দৃশ্যের দেখা মেলে। অসংখ্য নৌকায় উচ্চশব্দে গান বাজিয়ে অশ্লীল নৃত্য করতে দেখা যায় বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কিশোর-তরুণ-যুবকদের। পরিবার নিয়ে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের পরিবারের নারী সদস্যদের দেখলেই করা হয় যৌন হয়রানি। 
কলেজশিক্ষার্থী মাহবুবা আক্তার বলছিলেন, ‘আমরা পাঁচজন বান্ধবী বিলশায় ঘুরতে এসেছিলাম। এসে বিপদে পড়েছি। বিভিন্ন নৌকা থেকে আমাদের দেখে অশ্লীল বাক্য ও অঙ্গভঙ্গি দিয়ে নৃত্য করা হচ্ছে। বাপ-দাদার মুখে শুনেছি, আগে এসব নোংরামি চলনবিলে হতো না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত টহল দেওয়া হলে হয়তো নোংরামি কিছুটা হলেও কমবে। তখন আমরা সুস্থ বিনোদনের জন্য ঘুরতে আসতে পারব।’

নৌকার মধ্যেই প্রকাশ্যে মাদক সেবন করে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিও করছিল অনেকে। স্থানীয় অনেকের অভিযোগ, কিছু নৌকায় ‘ভাড়াটে’ মেয়ে নিয়ে অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন করা হয়। বিভিন্ন নৌকায় এসব কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বসানো হচ্ছে জুয়ার আসর। শুধু তাই নয়, চলনবিলে যত্রতত্র প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলার কারণে নষ্ট হচ্ছে চলনবিলের জীববৈচিত্র্যও।
চাটমোহর থেকে বিলশায় ঘুরতে এসেছিলেন পর্যটক মো. সানোয়ার হোসেন। তাঁর ভাষ্য, ‘আমি দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে চলনবিলের বিভিন্ন স্থানে ঘোরার জন্য এসেছিলাম। একটি নৌকা নিয়ে ঘোরার সময় আমার স্ত্রী ও মেয়েদের দেখে যৌন হয়রানি করতে থাকে ভ্রমণে আসা যুবকরা। আমি খুব বিব্রত অবস্থায় পড়ে গিয়েছি। এমন পরিবেশ থাকলে কখনও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘুরতে আসব না।’
বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকে নৌকা ভাড়া নিতে আসেন চাঁচকৈড় বাজারের ব্যবসায়ী রুহুল আমীনের কাছে। তিনি বলেন, সমঝোতা হলে এক-দু’দিনের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। যারা ভাড়া নেয়, তারা পিকনিক বা গান বাজিয়ে বিনোদনের কথা বলে। তারপরও অশ্লীল কাজ যেন নৌকায় না হয়, সে ব্যাপারে মাঝিদের সতর্ক করে দেন।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার চলনবিলসহ নদীতে উচ্চ শব্দে গান পরিবেশন ও অশ্লীল নৃত্য বন্ধে গুরুদাসপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন একজন চিকিৎসক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ চিকিৎসক জানান, তিনি সরকারি হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার। তাঁর বাড়ি উপজেলার একটি এলাকার নদীতীরবর্তী স্থানে। চলনবিলে প্রবেশ করতে তাঁর বাড়ির সামনের নদী দিয়ে নৌকাগুলোকে যেতে হয়।
চিকিৎসকের ভাষ্য, নৌকা ভ্রমণের নামে অসংখ্য সাউন্ডবক্স উঠিয়ে উচ্চ শব্দে অশ্লীল গান ও নৃত্য পরিবেশন করতে করতে যায় অনেকে। তাঁর বাড়িতে হৃদরোগী রয়েছে। উচ্চ শব্দের গান অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্যও হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। এর থেকে প্রতিকার পেতে তিনি অভিযোগ দিয়েছেন।

চেষ্টা করেও চলনবিলে ঘুরতে আসা এসব কিশোর-তরুণের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। সাংবাদিক পরিচয় দিলে তারা কথা বলতে চাননি। অনেকে নৌকা নিয়ে চলে যান। একটি নৌকার মাঝির ভাষ্য, সিংড়া থেকে ২০-৩০ জনকে নিয়ে তিনি এসেছিলেন। তাদের নিষেধের পরও যৌন হয়রানি ও অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিতে নাচানাচি করতে থাকে। পুলিশের ভয় দেখিয়ে তাদের শান্ত করেন।
এ বিষয়ে গুরুদাসপুর থানার ওসি মো. উজ্জ্বল হোসেন বলেন, চলনবিলের গুরুদাসপুর অংশে টহল পরিচালনার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানাবেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা বলেন, চলনবিলের সার্বিক পরিবেশ বজায় রাখতে দ্রুত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। এ ছাড়া সব পর্যটনকেন্দ্রে টহল পরিচালনার জন্য নেওয়া হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।

আরও পড়ুন

×