দুশ্চিন্তায় সিলেট বোর্ডের পরীক্ষার্থীরা
বন্যা ও আন্দোলনে বারবার এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো

ফাইল ছবি
পঙ্কজ দে, সুনামগঞ্জ
প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৪ | ১১:৩৯
প্রথমে বন্যা ও পরে আন্দোলন এবং কারফিউর কারণে পরীক্ষা পেছানোয় উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে সময় কাটাচ্ছে সুনামগঞ্জসহ সিলেট বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের অনেকে বলছে, পরীক্ষা পেছানোয় এইচএসসি পরীক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে সময় কম পাবে তারা। এ ছাড়া অন্য বোর্ডের শিক্ষার্থীরা সাতটি পরীক্ষা শেষ করেছে। সিলেট বোর্ডে শেষ হয়েছে মাত্র তিনটি। এ কারণে এই বোর্ডের শিক্ষার্থীদের উৎকণ্ঠাও বেশি।
জানা গেছে, সিলেট বিভাগে এবার ৮৩ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ১৫ হাজার ৫৮৬ জন, বাণিজ্য বিভাগে ১১ হাজার ৩৭৭ ও মানবিক বিভাগে ৫৬ হাজার ১৯১ জন। শুধু সুনামগঞ্জ জেলায় এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ১৫ হাজার ৭১৬ জন শিক্ষার্থী।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী আবু সাফওয়ান বলে, সারাদেশে গত ৩০ জুন থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। সিলেট বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই অন্য বোর্ডের শিক্ষার্থীরা বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র এবং ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা শেষ করেছে। বন্যার কারণে সিলেট বোর্ডে পরীক্ষা শুরু হয়েছে ৯ জুলাই থেকে। এ কারণে অন্য বোর্ডের শিক্ষার্থীরা তাদের চেয়ে ১০ দিন এগিয়ে রয়েছে। এখন যদিও সারাদেশে পরীক্ষা হচ্ছে না; কিন্তু অন্য বোর্ডের শিক্ষার্থীরা বাংলা-ইংরেজিসহ প্রধান প্রধান পরীক্ষা শেষ করায় তাদের চাপ কমে গেছে। তাদের দুশ্চিন্তাও কম।
সিলেট মুরারী চাঁদ কলেজের (এমসি কলেজ) এইচএসসি পরীক্ষার্থী তাসনিয়া আফরিন বলে, ডিসেম্বরের শুরুতে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা হবে। এতে দেশের সব পরীক্ষার্থী একই রুটিনে পরীক্ষা দেবে। অন্য বোর্ডের পরীক্ষার্থীরা তাদের চেয়ে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে দুই সপ্তাহ বেশি সময় পাবে। এসব ভাবলে দুশ্চিন্তা হওয়া স্বাভাবিক।
সিলেটের জালালাবাদ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী নবনিতা দে বলে, তাদের সহপাঠীদের মধ্যে যারা দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে বা উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে চায়, তাদের অনেকে আইএলটিএসের জন্য ভর্তি হয়েছে। আগস্টের শেষ দিকে তাদের স্থগিত পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে। এ কারণে আগস্ট সেশনে সিলেট বোর্ডের শিক্ষার্থীরা আইএলটিএসের জন্য ভর্তি হতে পারবে না। এ নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছে অনেকে।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আবদুর রকিব তারেক বললেন, এইচএসসিতে ১৩০০ মার্কের পরীক্ষা। সিলেট বিভাগের শিক্ষার্থীদের এখনও এক হাজার মার্কের পরীক্ষা বাকি। অন্য বিভাগের বাকি ৬০০ মার্কের পরীক্ষা। দেশের পরিস্থিতি কোনো কারণে খারাপ হলে শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবেই চিন্তিত-উদ্বিগ্ন হয়। সিলেট বিভাগে শিক্ষার্থীদের দুশ্চিন্তা অন্যদের চেয়ে আরও বেশি। যেহেতু তাদের বাংলা-ইংরেজির মতো পরীক্ষা বাকি রয়েছে, তাই অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলো ভালোয় ভালোয় শেষ হলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা কিছুটা কমবে।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও এইচএসসি পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ জমসিদ আলী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সিলেট বিভাগের স্থগিত পরীক্ষাগুলো ১৩ আগস্ট, ১৮ আগস্ট, ২০ আগস্ট ও ২২ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে পরীক্ষার রুটিন দেওয়া হয়েছে। আন্দোলন কিংবা কারফিউর কারণে স্থগিত হওয়া ১৪ জুলাই, ১৬ জুলাই, ১৮ জুলাই, ২১ জুলাই ও ২৩ জুলাইয়ের পরীক্ষার রুটিন এখনও হয়নি। বাংলা-ইংরেজির মতো পরীক্ষা না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে তো কারও হাত নেই। আন্দোলন ও কারফিউর জন্য স্থগিত পরীক্ষা সারাদেশে একসঙ্গেই হবে।
সিলেট বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুণ চন্দ্র পাল বলেন, কারফিউ কিংবা অস্থিতিশীল পরিবেশের কারণে স্থগিত পরীক্ষা সারাদেশে একসঙ্গে হবে। সব পরীক্ষাই একেবারে বাধ্য হয়ে পেছানো হয়েছে। সামনে যে বিপদ আসে, সেটি মোকাবিলা করাই প্রধান বিবেচ্য বিষয় হবে। এ কারণে পরে কী হবে, সেটি অনেক সময় চিন্তা করার সুযোগই থাকে না। তবে সারাদেশের পরীক্ষা একসঙ্গে শেষ করা যায় কিনা, এ চিন্তা নিশ্চয়ই সবারই থাকবে।
- বিষয় :
- এইচএসসি
- সিলেট
- সিলেটে বন্যা
- কোটা আন্দোলন