ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

কোটা সংস্কার আন্দোলন

এখন যা বলছেন জাবি শিক্ষার্থীরা

এখন যা বলছেন জাবি শিক্ষার্থীরা

প্রতীকী ছবি

আবু নাঈম তরুণ, জাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪ | ১৭:০৫ | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪ | ১৭:২৬

কোটা সংস্কারের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর উপাচার্যের বাসভবনে শাখা ছাত্রলীগসহ বহিরাগতরা সশস্ত্র হামলা করে। এরপর থেকে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনার পর শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকসহ কয়েকটি হলের ‘পলিটিক্যাল ব্লকে’র রুম ভাঙচুর করা হয়।

পরদিন হল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলে প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্যসহ অন্যান্য শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে পুলিশ। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রশাসন শূন্য।

গত কয়েকদিন সরেজমিন দেখা যায়, উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ ঊর্ধ্বতনরা আসছেন না অফিসে। এদিকে কর্মবিরতিতে আছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে কিছু কর্মচারীকে ফাইল নিয়ে বের হতে দেখা যায়। 

এছাড়া এ ঘটনার পর থেকে হামলাকারী ছাত্রলীগকে ও তাদের মদদদাতা শিক্ষকদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে লিখেছেন, ছাত্রলীগ প্রবেশ নিষেধ। এছাড়া ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় স্বৈরাচার প্রতিরোধ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে দেয়াল লিখন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে ক্যাম্পাসের আশেপাশে থেকে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করছেন আন্দোলনরতরা। গত শনিবার কোটা সংস্কার আন্দোলনে শহীদ ছাত্র-জনতার স্মৃতি স্মরণে ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ স্থাপন করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেল সমকালকে বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম বৈষম্যবিরোধী শহীদ মিনার গড়েছে অবরুদ্ধ জাহাঙ্গীরনগর। পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনীর বুট আর সাঁজোয়া যান এড়িয়ে অতি তাড়াহুড়ায়, সন্তর্পণে শ্রদ্ধার এই নিবেদন! ইতিহাসে এই আত্মত্যাগ লিখে রাখার কাজে জাহাঙ্গীরনগর অগ্রগামী হয়ে রইলো।’

তবে আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ একটি আন্দোলনে সারাদেশে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করে শহীদ করা হয়েছে। অথচ তাদেরকে শাস্তির আওতায় না এনে সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত হত্যা ও হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনা না হচ্ছে, আমরা এ আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

শিক্ষার্থী শেখ রবিন জানান, ‘ভিসি ও প্রক্টর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ৷ তাদের মদদেই শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। তাই, অবিলম্বে তাদের ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে হবে এবং জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কালোরাত্রি হিসেবে পরিচিত ১৫ জুলাই ছাত্রলীগ নামক সন্ত্রাসী সংগঠন, যারা কিনা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো উপাচার্য ভবনে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা চালিয়েছে। সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং ক্যাম্পাসে সকল প্রকার ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে হবে।’

শেখ রাসেল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক তাজউদ্দীন শিকদার বলেন, ‘আন্দোলনের সময় হলে ৮ থেকে ১০টি রুমে দরজা ভাঙা হয়েছে। রুমে পলিটিক্যাল ছাত্রদের তোশক ও জামা-কাপড় বের করে ফেলে দেওয়া হয়েছে৷ তবে খুব একটা ভাঙচুর আমার নজরে আসেনি৷ বিশ্ববিদ্যালয় এখন যেহুতু বন্ধ রয়েছে, তাই ভাঙচুরে জড়িত কারা ছিল, তা নির্ণয় করা যাচ্ছে না৷ শুধু শিক্ষার্থীরা নাকি বহিরাগত কেউ ছিল, তা এখনো পরিষ্কার বুঝা যায়নি৷ বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর তদন্ত কমিটির মাধ্যমে জড়িতদের শনাক্ত করা হবে।’

তবে এখন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস স্বাভাবিক বলে জানিয়েছেন প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবির। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা চেষ্টা করছি৷ বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের অনুমতি পেলেই আমরা কাজ শুরু করবো৷ এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা চাই৷ আন্দোলনের সময় বিভিন্ন হলে ভাঙচুর হয়েছে শুনেছি। সেগুলো যথাযথভাবে মেরামত করতে হবে৷ এছাড়া এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷’ 

তবে হলের কতগুলো রুম ভাঙচুর হয়েছে এ বিষয়ে এখনও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তথ্য আসেনি। শীঘ্রই প্রভোস্টরা এ বিষয়ে জানাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। 

আরও পড়ুন

×