ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ঈশ্বরদীর টিপু সুলতান রোড  

ভাঙতে ভাঙতে বেহাল দুই কিলোমিটার সড়ক

ভাঙতে ভাঙতে বেহাল দুই কিলোমিটার সড়ক

কাদা–মাটিতে একাকার ঈশ্বরদী পৌর শহরের ব্যস্ততম টিপু সুলতান রোড

সেলিম সরদার, ঈশ্বরদী (পাবনা)

প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৪ | ২০:০৫

সড়কের পিচ উঠে গেছে। খানাখন্দ হয়ে খোয়া-বালুও নেই কয়েক জায়গায়। দুই ধার দেবে যাওয়ায় যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। অনেক সময় গর্তে পড়ে নষ্ট হচ্ছে গাড়ি। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় চালকদের। অসহায় হয়ে পড়েন যাত্রীরাও। এ চিত্র পাবনা জেলার ঈশ্বরদী পৌর শহরের ব্যস্ততম টিপু সুলতান রোডের।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, গত ৮ বছর এই সড়কে কোনো সংস্কারকাজ হয়নি। ওই পথে চলাচলকারী গাড়ির চালক ও পথচারীদের প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সড়ক ভাঙা হওয়ায় কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য পরিবহনে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। 

ব্যবসায়ী তৌফিক আলম সোহেল জানান, ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত ওজনের ভারী যানবাহন চলাচল করায় রাস্তাটি ভেঙে যাচ্ছে। বৃষ্টির পানি ভাঙাচোরা অংশে জমে দুর্ভোগের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। মেরামতেরও কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। 

একই কথা বলেন পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহুরুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, এ রাস্তার ধারণক্ষমতা ২০ টন ওজনের যান। অথচ প্রতিদিন ৪০-৫০ টন বালুবোঝাই ডাম্প ট্রাক চলাচল করছে। এতে নির্ধারিত সময়ের আগেই রাস্তাটি ভেঙে গেছে। 

টিপু সুলতান রোডটি ঈশ্বরদী শহর থেকে সাঁড়াগোপালপুর, বকশিরচক তালতলা হয়ে ঈশ্বরদী ইপিজেড, পাকশী পেপার মিল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প হয়ে লালন শাহ সেতু পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রথম শ্রেণির ঈশ্বরদী পৌরসভার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও শহরের রেলওয়ে গেট থেকে ঈশ্বরদী ইপিজেডে যাতায়াতের প্রধান সড়ক এটি। বহু বছরের পুরোনো এই সড়কে সারা বছরই ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হয় পাকশী-টু ঈশ্বরদীতে চলাচলরত সব ধরনের যানবাহন ও সাধারণ মানুষকে।
প্রতিদিন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যৎকেন্দ্র ও ইপিজেডের ১০ থেকে ১৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী, বেপজা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সাঁড়াগোপালপুর প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়, পাকশী রেলওয়ে কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেড় হাজার শিক্ষার্থী ও রূপপুর প্রকল্পে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের যাতায়াত টিপু সুলতান রোড দিয়ে। 
ইঞ্জিনচালিত ছোট-বড় শত শত যানবাহন, যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক আর পদ্মা নদীর বালু বহনকারী ট্রাক্টর, দশ চাকার ডাম্প ট্রাকের চলাচলে দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা ব্যস্ত থাকে সড়কটি। প্রতিনিয়ত ভারী যানবাহন চলাচলে ব্যস্ততম সড়কটির প্রায় ২ কিলোমিটার অংশ ভাঙতে ভাঙতে এমন অবস্থায় এসে ঠেকেছে যে, এখন হালকা যান চলাচলেরও উপযোগী নেই। বাধ্য হয়ে ৩-৪ কিলোমিটার ঘুরে অন্য রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে শ্রমিক-কর্মচারীদের আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত যানবাহন। তবে রিকশা, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, ইঞ্জিনচালিত নছিমনসহ ছোটখাটো যানবাহন বাধ্য হয়ে চলাচল করছে। মাঝেমধ্যেই এসব গাড়ির চাকা গর্তে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। 
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, রাস্তা ভাঙাচোরা। দু’পাশে জন্ম নেওয়া ঝোপঝাড়ের কারণে সন্ধ্যার পর চলাচল করা যায় না। বৃষ্টি এলে রাস্তায় কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যায়। দিনে জোঁক আর রাতে শেয়াল চলে আসে রাস্তার ওপর। 

ইপিজেডের যানবাহনের চালক ও শ্রমিকরা জানান, প্রতিদিন ভাঙা রাস্তায় একাধিক গাড়ি উল্টে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থাকে। এতে গাড়ি ভেঙে নষ্ট হয়ে যায়। যাত্রী ও চালকরাও আহত হন। এছাড়া দীর্ঘ সময় গাড়ি সড়কে পড়ে থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। 

পৌরসভার মেয়র ইছাহক আলী মালিথা বলেন, রাস্তা সংস্কার করার কোনো বাজেট আপাতত নেই। ঢালাই দিয়ে নতুন করে তৈরি করার জন্য একনেকে প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নতুন করে রাস্তা নির্মাণ করা হবে।

আরও পড়ুন

×