সাগরে নৌকা ডুবে শিশুসহ ৯ রোহিঙ্গার মৃত্যু

স্বজনের মরদেহ শনাক্তের চেষ্টা এক নারীর। ছবি: সমকাল
টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৪ | ১৬:৩৪ | আপডেট: ০৬ আগস্ট ২০২৪ | ১৬:৫০
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে চলমান যুদ্ধের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকা ডুবে শিশুসহ ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় নিখোঁজ হয়েছে অন্তত ২২ জন। সাগরের কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হাবিরছড়া ও রাজারছড়া পয়েন্ট এলাকার সাগরে মঙ্গলবার বেলা ১২টার পরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতের মধ্যে ৮ জন শিশু-কিশোর নারী ও এক জন পুরুষ রয়েছে। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে দুই জনকে।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসমান গনি বলেন, ‘সাগরে রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা ডুবির ঘটনায় জেলেরা ৯ জন রোহিঙ্গা মৃতদেহ উদ্ধার করা করেছে। যেহেতু বাংলাদেশে এক অদ্ভুত পরিস্থিতি চলছে। তাই আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিদের কথা বলে মৃতদেহগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
এ বিষয়ে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ বলেন, মিয়ানমার থেকে প্রাণে বাঁচতে পালিয়ে আসার সময় টেকনাফে সাগরে নৌকা ডুবির ঘটনায় ৯ জন রোহিঙ্গা মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের নির্দেশনা অনুসারে ক্যাম্পে থাকা স্বজনদের কাছে নিহতদের মৃতদেহ হস্তান্তরের প্রস্তুতি চলছে। ডুবে যাওয়া নৌকায় ৩১ জন রোহিঙ্গা ছিল বলে জানা গেছে।
স্থানীয় এক জেলে বলেন, হাবির ছড়া ঘাটের শরীফ মাঝির নৌকায় মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা পারাপারের সময় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া মোহাম্মদ নাজির, নুর আলম ওরফে নুরু মাঝি, মোহাম্মদ হোসেন, মো. কবিরের নৌকায় মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা পারাপার করে আসছে। এখনো রোহিঙ্গা বোঝাই কয়েকটি নৌকা সাগরে ভাসছে।
নৌকা ডুবিতে উদ্ধার রোহিঙ্গা নারী তবেদিলা বেগম বলেন, মিয়ানমারের ফয়েজিপাড়া ও আলী পাড়ায় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে চলমান যুদ্ধে বোমা হামলা হয়েছে। এতে অনেক লোকজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তাই আমরা প্রাণে বাঁচতে টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি।
তিনি বলেন, নৌকায় আমার দুই মেয়েসহ চার জন সদস্য ছিলাম। ছোট মেয়ে ও এক নাতনির মৃতদেহ পাওয়া গেছে। বাকিদের খোঁজ মেলেনি এখনো। আমরা এই নৌকায় ৩১ যাত্রী ছিলাম। যারা গুলির মুখে পড়ে এখানে পালিয়ে আসতে রওনা করেছিলাম মিয়ানমার থেকে। আমাদের মতো অনেকে ওপার থেকে এপারে পালিয়ে আসছে।
এদিকে সকালে মিয়ানমারে গুলিবিদ্ধ ও মর্টারশেল বিস্ফোরণে আহত অবস্থায় এক শিশুসহ ছয়জন রোহিঙ্গাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক প্রণয় রুদ্র। তিনি বলেন, বিজিবি পক্ষ থেকে নিয়ে আসা আহতদের মধ্য শিশুর পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এদের দুইজনকে কক্সবাজার পাঠানো হয়েছে। বাকিদের চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীরদ্বীপ পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার নাফ নদীতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি ও বাংলাদেশ কোস্ট-গার্ডের সদস্যরা দিনরাত নাফ নদী ও সীমান্ত সড়কে টহল বৃদ্ধি করেছে। সেটি চলমান এবং যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সব সময় প্রস্তুত সীমান্তরক্ষী বিজিবি ও কোস্টগার্ড।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, সাগরে নৌকা ডুবির ঘটনায় ৯ জন রোহিঙ্গা মৃতদেহ উদ্ধারের খবর শুনেছি। এ বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। বাংলাদেশে এই অদ্ভুত পরিস্থিতিতে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সীমান্তে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও বর্ডার গার্ড বিজিবি সর্তক অবস্থানে রয়েছেন।
সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পারাপার ঠেকাতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফের-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, 'এখনো মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ চলমান। তবে আমরা সীমান্তে আমরা সর্তক অবস্থা রয়েছি।
- বিষয় :
- টেকনাফ
- নৌকাডুবি
- রোহিঙ্গা সংকট