ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

অনুমোদনহীন শত শত টন ইউরিয়া সার বিক্রি

অনুমোদনহীন শত শত টন ইউরিয়া সার বিক্রি

উন্মুক্ত স্থানে রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট ইউরিয়া সার রক্ষার চেষ্টা। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ীতে সমকাল

 আমিনুল ইসলাম খান রানা, সিরাজগঞ্জ

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৪ | ০০:৩৯

জেলার বাঘাবাড়ীতে সরকারি বিসিআইসির বাফার গোডাউনের পাশে হাজার হাজার টন ইউরিয়া সার দু’বছর ধরে পড়ে আছে। উন্মুক্ত স্থানে পরিত্যক্ত থাকায় বৃষ্টিতে ভিজে ও রোদে পুড়ে এ সার শিলা-পাথরের মতো জমাট বেঁধে গুণগত মান নষ্ট হয়েছে। বিদেশ থেকে আনা এ সারের গুণমান নষ্ট হওয়ায় বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করেনি। তবে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা এবং তাঁর সহযোগীরা এখান থেকে অবৈধভাবে ডিলারদের কাছে শত শত টন সার বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানহীন এ সার কৃষকদের কাছে গেলে তাতে তাদের সর্বনাশ হবে। 
জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোর জেলার কৃষকদের বোরো মৌসুমে ভর্তুকি মূল্যে বিতরণের জন্য এসব সার আমদানি করা হয়। এ সারের গুণগত মান পরীক্ষার আগেই তা জমাট বাঁধায় গ্রহণ করেনি বাফার গুদাম কর্তৃপক্ষ। সারের পরিবহন ঠিকাদার নবাব ট্রেডিং বিলম্বে পরিবহন করায় সারের মান খারাপ হয়ে যায়। দু’বছর ধরে এসব সার খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকলেও ভর্তুকি বিল নেওয়ার জন্য বারবার চেষ্টা করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে তা সফল হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দুর্নীতি ও সরকারের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ এবং প্রতারণার দায়ে মামলার জালে জড়িয়ে নবাব ট্রেডিংয়ের কর্ণধার কারাগারে রয়েছেন। এ সুযোগে বাঘাবাড়ী বন্দর কর্মকর্তা ও ইজারাদারের যোগসাজশে এসব সার উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় পাচার করা হচ্ছে। গরির কৃষকরা এ সার কিনে ক্ষতির মধ্যে পড়তে পারেন। 
সরেজমিন দেখা যায়, বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের প্রবেশমুখে স্টক ইয়ার্ডের প্রবেশমুখে রূপবাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল মজিদের সাত তলা নতুন নির্মিতব্য ভবন রয়েছে। আব্দুল মজিদও বন্দর ইজারাদারদের একজন। তাঁর ভবনের দক্ষিণে বাফার  গুদামের উত্তরে খোলা আকাশের নিচে পরিত্যক্ত রয়েছে এ সার। জানা গেছে, তিনি নবাব ট্রেডিংয়ের কাছে টাকা পাবেন। এ টাকা আদায়ের জন্য সার বিক্রি করা হচ্ছে। 
বন্দরের আরেক ইজারাদার আব্দুস সালামের কয়েকজন শ্রমিককে প্রচণ্ড রোদের মধ্যেই কাঠের বিশাল হ্যামার দিয়ে ওই সার চূর্ণবিচূর্ণ করতে দেখা যায়। ছবি তুলতে দেখেই তারা একে একে সটকে পড়েন। শ্রমিকরা জানান, ১০-১২ দিন ধরে বন্দর ইজারাদারের নির্দেশে শিলাপাথরের মতো এ সার গুঁড়া করা হচ্ছে। 
ইজারাদার সালামের ব্যবসায়িক অংশীদার জেলা জ্বালানি তেল বণিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক বলেন, ‘বন্দর ইজারাদাররা নবাব ট্রেডিংয়ের কাছে টাকা পাবেন। তা পরিশোধের জন্য হয়তো জমাট বাঁধা সার বিক্রি করা হচ্ছে।’ 

ইজারাদার আব্দুস সালাম সমকালকে বলেন, ‘আদালত ও বিসিআইসির নির্দেশে এসব  সার বিক্রি করা হচ্ছে। কারা কীভাবে বিক্রি করছে বা কিনছে, তা আপনারা খুঁজে দেখুন।’ 
জেলা কৃষি কর্মকর্তা বাবুল কুমার সূত্রধর বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জানি না। বাফার বা বন্দর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমাদের জানায়নি।’
বাঘাবাড়ী বন্দরের বিসিআইসির সহকারী পরিচালক ও বাফার ইনচার্জ সিকান্দার আলী বলেন, ‘চারপাশে অনেক স্থানে খোলা আকাশের নিচে দীর্ঘদিন থেকেই সার পড়ে আছে, সেসব আমাদের নয়। আমাদের মজুতকৃত ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়া সার গুদামেই মজুত রয়েছে। সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোর জেলার ২৭১ জন ডিলারকে ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়া সার এখান থেকেই বরাদ্দ দেওয়া হয়।’ 
তিনি বলেন, দু’বছর আগে নবাব ট্রেডিং ১০-১২ হাজার টন ইউরিয়া সার বাঘাবাড়ীর বাফারে নিয়ে আসে। গুণগত মান নষ্ট হওয়ায় তা বুঝে নেওয়া হয়নি। দু’বছর পর সেগুলো অসাধু ডিলাররা কিনে নিয়ে সিরাজগঞ্জ ও অন্যান্য জেলায় বিক্রি করলে কৃষক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন,  ‘বিষয়টি জানার পর বিসিআইসির চেয়ারম্যানকে ফোন করেছি। বিষয়টি তাঁকে দেখতে অনুরোধ জানিয়েছি। কৃষকদের ক্ষতির কথা বিবেচনা করে বাঘাবাড়ী বন্দর থেকে জমাট বাঁধা ওই সার অন্যত্র পরিবহন আপাতত বন্ধ করা হয়েছে।’  

আরও পড়ুন

×