ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

ইউরিয়া সারের অভাবে বিপাকে আমন চাষিরা

ইউরিয়া সারের অভাবে বিপাকে আমন চাষিরা

ইউরিয়া

আনোয়ার হোসেন মিন্টু, জামালপুর

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪ | ০০:৫৪

চলতি আমন মৌসুমে উত্তরবঙ্গসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ২১ জেলার কৃষকের ভাগ্যে জুটছে না যমুনা সার কারখানার উন্নত মানের দানাদার ইউরিয়া। তাই চাষাবাদে নির্ভর করতে হচ্ছে আমদানি করা বিদেশি সারের ওপর। কবে নাগাদ গ্যাস সরবরাহ পাবেন আর কবে চালু হবে কারখানাটি, সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে চলতি মৌসুমে কারখানা জোন এলাকায় ইউরিয়া সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন সার ডিলার ও ব্যবসায়ীরা। এদিকে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় মরিচা ধরে নষ্ট হচ্ছে কারখানার মূল্যবান যন্ত্রপাতি। 
জানা গেছে, দানাদার ইউরিয়া উৎপাদনকারী কেপিআই-১ভুক্ত এ শিল্প প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯১ সালে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দিতে গড়ে ওঠে। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই দৈনিক ১ হাজার ৭০০ টন ইউরিয়া উৎপাদন করে আসছিল। নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদনের জন্য কারখানায় দৈনিক ৪২-৪৩ পিএসআই গ্যাসের প্রয়োজন। কিন্তু গ্যাসের চাপ স্বল্পতা ও যন্ত্রপাতির দুর্বলতার কারণে সর্বশেষ ১ হাজার ২০০ টন ইউরিয়া উৎপাদন হচ্ছিল। এ সার দেশের ২১টি জেলার প্রায় আড়াই হাজার ডিলারের মাধ্যমে কৃষকের মধ্যে সরকার নির্ধারিত মূল্যে সরবরাহ করা হয়। 
কারখানার তথ্যমতে, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি গত ১৫ জানুয়ারি থেকে যমুনা সার কারখানায় গ্যাসের চাপ কমিয়ে দেয়। এতে ওইদিন থেকেই বন্ধ হয়ে যায় কারখানাটির উৎপাদন। এর পর থেকেই কারখানার কমান্ডিং এরিয়ার ২১ জেলায় সারের চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে বিদেশ থেকে আমদানি করা সার দিয়ে।
কারখানার শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেন, কারখানা বন্ধ থাকায় সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। তাঁর ভাষ্য, এ কারখানায় এক টন সার উৎপাদনে যে টাকা খরচ হয়, বিদেশি সার আমদানি করতে খরচ হয় তার ৪ গুণ। কারখানাটি চালু হলে একদিকে সরকার অতিরিক্ত ভর্তুকি থেকে রেহাই পাবে, আর কৃষক কম খরচে হাতের কাছে ভালো সার পাবেন।
জামালপুর চেম্বারের সহসভাপতি ও সার ডিলার ইকরামুল হক নবীন বলেন, দেশের বৃহৎ এই সারখানা শুধু গ্যাসের অভাবে সাত মাস ধরে বন্ধ থাকায় উন্নত মানের ইউরিয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ২১ জেলার কৃষক। জরুরি ভিত্তিতে কারখানাটি চালু না হলে চলতি আমনের মৌসুমেও এ ইউরিয়া ব্যবহার করতে পারবেন না তারা।
স্থানীয় আশরাফুল ইসলাম মানিক বলেন, উত্তরবঙ্গসহ ২১ জেলার কৃষক এ কারখানার সারের ওপর নির্ভরশীল। দীর্ঘদিন ধরে কারখানাটি বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। তা ছাড়া কারখানাটি চালু না হলে চলতি আমন মৌসুমে সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। 
এক প্রকৌশলী জানান, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কারখানার মূল্যবান যন্ত্রাংশ মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যায়। যে কারণে কারখানা সচল করতে প্রতিবছর ওভারহোলিংয়ে খরচ করতে হয় কোটি কোটি টাকা।
কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মোহা. মোসলেহ উদ্দীন বলেন, ইউরিয়া উৎপাদনের জন্য কারখানা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত। কিন্তু গ্যাস না থাকায় কারখানা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে কবে নাগাদ গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বা কারখানা চালু হবে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি তিনি।

আরও পড়ুন

×