ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

অনলাইনে ভয়ংকর জুয়ার জাল

অনলাইনে ভয়ংকর জুয়ার জাল

জুয়া

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৪ | ০০:২৫

ঈশ্বরদী প্রেস ক্লাবের পাশেই ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংক। এখানে কাজ করতেন স্থানীয় এক যুবক। মোবাইলে ফ্লেক্সিলোড, বিকাশে টাকা পাঠানো ছিল তাঁর কাজ। কাজের ফাঁকে শুরু করেন অনলাইনে জুয়া খেলা। প্রথম দিন খেলায় জিতলেও এরপর থেকে হারতে থাকেন। প্রতি মাসেই দুই থেকে চার হাজার টাকা খোয়াতে থাকেন। এভাবে প্রতিষ্ঠানের ৪০ হাজার টাকা তুলে জুয়ায় খরচ করে ফেলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে চাকরিচ্যুত করা হয় তাঁকে। 
দেশে ছড়িয়ে পড়ছে অনলাইনকেন্দ্রিক জুয়ার জাল। অল্প সময়ে বেশি লাভের আশায় অনেক তরুণ এই নেটওয়ার্কে পা ফেলছেন। স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতায় মধ্যবয়সী থেকে শুরু করে স্কুল শিক্ষার্থীরাও জড়িয়ে পড়ছে এই ভয়ানক ফাঁদে। জুয়ার ‘ভার্চুয়াল বিষ’ ছড়িয়ে পড়ছে শ্রমজীবী মানুষের মাঝেও। সর্বস্ব খুইয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকে। বাড়ছে পারিবারিক অশান্তি-কলহ। 
সাহাপুর গ্রামের এক নারী জানান, তাঁর স্বামী অনলাইন জুয়ায় আসক্ত। কাজ করে যা পেতেন জুয়ায় খরচ করে ফেলতেন। একপর্যায়ে ঘরের জিনিসপত্র বিক্রি শুরু করেন। প্রতিবাদ করলেই নির্যাতন করতেন। নেশা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে গেলে বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাদের। 
জুয়ায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্মার্টফোনে মোস্টবেট, ওয়ান এক্সেট, বেট উইনার, বেট ৩৬৫, মেলবেট, লাইনবেট, জিটুইন, ক্রিক্সে, প্যারিম্যাচ, এমসিডব্লিউসহ বিভিন্ন অ্যাপস ডাউনলোড করা হয়। পরে লিঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া হয় আগ্রহীদের মধ্যে। ১০ টাকা থেকে শুরু করে লাখ লাখ টাকার খেলা হয়। রাশিয়া, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে জুয়ার সাইট পরিচালনা করা হয়। সাইট পরিচালনায় থাকা এজেন্টরা বিদেশি অ্যাপস পরিচালনাকারীদের কাছ থেকে হাজারে ৪০ টাকা কমিশন পান। এভাবে এ জুয়ার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কলেজশিক্ষার্থী জানান, প্রথমে ৩৬ টাকা বিনিয়োগ করে ১৬ হাজার টাকা পান। এরপর লোভে পড়ে আবার খেলেন। তবে জিততে পারেননি। জুয়ার নেশায় পড়ে মোটরসাইকেলও বিক্রি করে দিয়েছেন। 
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, মোবাইলে গেম ও জুয়া খেলতে খেলতে এ পর্যন্ত প্রায় ৫৫ হাজার টাকা চলে গেছে। কোনো লাভ হয়নি। পড়ালেখার ক্ষতিতো হয়েছেই। চোখেরও বারোটা বেজেছে।  
ঈশ্বরদী বাজারের ব্যবসায়ী ও বণিক সমিতির সদস্য সজিব হোসেন প্রামাণিক জানান, বাজারের অসংখ্য দোকানের কর্মচারী এই জুয়ায় আসক্ত। দোকানে যখন ক্রেতা না থাকে তখন অনলাইনে জুয়া খেলে তারা। 
পিয়ারাখালি এলাকার এক জুয়াড়ি জানান, অনলাইন জুয়া প্রকাশ্যে খেললেও কেউ বুঝতে পারে না। এটা এমন নেশা যে, একবার খেলা শুরু করলে টাকা শেষ না হওয়া পর্যন্ত খেলতে ইচ্ছা করে। 
ঈশ্বরদী থানার আমবাগান পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক হাসান বশির বলেন, অনলাইন ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন জুয়ার অ্যাপে খেলে অনেকে নিঃস্ব হয়েছেন। এসব জুয়ার টাকা খুব সহজেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হাতবদল হচ্ছে। এর আগে কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় আছে। 

আরও পড়ুন

×