ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

লক্ষ্মীপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ৮০ শতাংশ এলাকা পানির নিচে

লক্ষ্মীপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ৮০ শতাংশ এলাকা পানির নিচে

নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ছবি: সমকাল

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি 

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৪ | ১৪:১৯

লক্ষ্মীপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বৃষ্টি বন্ধ থাকলেও পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী জেলার বন্যার পানি রহমতখালী খাল হয়ে লক্ষ্মীপুরের লোকালয়ে ঢুকে ক্রমশ পানি বাড়ছে। অব্যাহত ভারী বৃষ্টি ও মেঘনা নদীর জোয়ারের ঢলে জেলার ৮০ শতাংশ এলাকা এখন পানির নিচে।

ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কায় মানুষ ছুটছে আশ্রয়কেন্দ্রে। হাস, মুরগী ও গবাদীপশুসহ জেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ২০ হাজারের বেশি মানুষ। বন্যার্তদের সহায়তায় সরাসরিভাবে ৫৭৬ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১০ লাখ ৭৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

জেলার পাঁচটি উপজেলা এখনও প্লাবিত। শনিবার সকালে কিছু এলাকার অল্প কিছু পানি কমছে। তবে আজ রোববার সকাল থেকে বৃষ্টি ও নতুন করে ঢলের পানি আসায় পানিবন্দি হয়ে জেলার অন্তত সাড়ে ছয় লাখ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। পানিতে ডুবে গেছে অনেক এলাকা, বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট। সেই সঙ্গে ডুবেছে নলকূপ, পানির ট্যাংকও। নদী, খাল, বিল, পুকুর—পানিতে সব একাকার। বানভাসি মানুষ জানিয়েছেন, এমন দুর্বিষহ অবস্থা ১৯৮৮ সালের বন্যার সময়ও হয়নি। এবারের বন্যা আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নোয়াখালীর পানির চাপে ঢেউ পড়ছে চন্দ্রগঞ্জ, চরশাহী, দিঘলী, হাজীরপাড়া, দত্তপাড়া, মান্দারী, কুশাখালী, তেওয়ারীগঞ্জসহ কয়েকটি ইউনিয়নে। এসব এলাকায় ভারী বর্ষণের পানি সঙ্গে যোগ হচ্ছে নোয়াখালী থেকে আসা পানি। চারদিক পানিতে থই থই করছে। অনেক এলাকায় কোমর সমান পানি রয়েছে। ঘরবাড়ির ভেতরেও পানি।

সদরের রহমতখালী খাল, রামগতি, কমলনগরের ভুলুয়া নদী, রামগঞ্জের ওয়াপদা, বিরেন্দ্র খাল, রায়পুরের ডাকাতিয়া নদীসহ বিভিন্ন স্থানে নদী-খাল দখল করে মাছ চাষ, সেতু, কালভার্ট, রাস্তা, দোকানপাটসহ স্থাপনা নির্মাণ করায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। জমা পানি নামতে বেগ পেতে হচ্ছে।

তাজল ইসলাম বয়স এখন সত্তর ছুঁই ছুঁই। তিনি কমলনগর উপজেলার চর কাদিরিয়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি বলেন, অধিকাংশ বাসাবাড়ির চুলা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় রান্নাবান্না বন্ধ আছে। এ অবস্থায় খাদ্যসংকট তৈরি হয়েছে পানিবন্দি পরিবারগুলোয়। বিশুদ্ধ পানিও পাওয়া যাচ্ছে না। উপজেলা সদরের সড়কগুলোও ডুবে যাওয়ায় প্রতিটি এলাকা এখন কার্যত বিচ্ছিন্ন। গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেসে যাচ্ছে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি।

খোরশেদ আলম নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমার ঘরবাড়িতে এখনো বুক ও গলা সমান পানি। পরিবারের ছয় সদস্যকে নিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছি।’ এলাকার কেউ কেউ ঘরের ভেতরে মাচা বানিয়ে থাকছেন, যোগ করেন তিনি।

দত্তপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মামুনুর রশিদ বলেন, ‘হঠাৎ করে আমাদের এলাকায় পানি বাড়ছে। এলাকায় দিনভর বৃষ্টি নেই। এগুলো নোয়াখালী থেকে আসা পানি। এতে মানুষের দুর্ভোগ-কষ্ট বাড়ছে।’

চরশাহী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম রাজু জানান, নোয়াখালীর পাশের সীমানায় তার ইউনিয়ন। এতে নোয়াখালীর পানির চাপ এদিকে আসছে। ঘরবাড়ি-রাস্তাঘাটে এখন ২-৪ ফুট পানি।

রামগঞ্জ উপজেলার ভাদুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাবেদ হোসেন ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক ইবিনে হুছাইন জানান, অনেক বাড়িতেই কোমরসমান পানি। মানুষ আতঙ্কে আছেন। আপাতত জীবন রক্ষার জন্য মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে প্রাণান্তকর চেষ্টা করছেন। অনেকে ত্রাণের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। সব মিলিয়ে অবর্ণনীয় এক মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন লক্ষ্মীপুরের মানুষ। সরকারি ও বেসরকারিভাবে যে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় কম বলে জানান এই দুই জনপ্রতিনিধি।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, গতকালের তুলনায় আজ পানি কিছুটা কমেছে। গড়ে ছয় ইঞ্চির মতো কমেছে। নদীতে ভাটা এলে জলাবদ্ধতা নিরসনে সব কটি স্লুইসগেট খুলে দেওয়া হয়। আবার জোয়ারের সময় গেটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ভারী বৃষ্টি না হলে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

কথা হয় লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জেপি দেওয়ানের সঙ্গে। তিনি বলেন, নোয়াখালীর পানির চাপ লক্ষ্মীপুরে আসছে। এতে পানি কিছুটা বাড়ছে। তবে বৃষ্টি না থাকায় রায়পুর ও রামগঞ্জে পানি কমছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে আগামী দু’দিনের মধ্যে পানি নেমে যাবে।

জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, ডাকাতিয়া ও রহমতখালী নদীসহ বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দেওয়ায় জলাবদ্ধতা ও বন্যা দেখা দেয়। গত দুই দিনে দুই শতাধিক বাঁধ কেটে দেওয়া হয়েছে। ফলে পানি নামতে শুরু করেছে।

আরও পড়ুন

×