বন্যা পরিস্থিতি

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপের কারণে অব্যাহত বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট অঞ্চলে বাড়ছে নদী ও হাওরের পানি। গত দুইদিন ধরে অব্যাহত বৃষ্টির পর আগামী তিনদিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ অবস্থায় সিলেটে বন্যার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ধরে সিলেটের সবকটি নদী ও হাওরাঞ্চলে পানি বাড়ছে।

পাহাড়ি ঢলের ডুবে শুক্রবার নালিতাবাড়ীতে বৃদ্ধ ও নারীসহ তিনজন এবং রাতে ঝিনাইগাতীতে একজন ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী মারা গেছেন। তবে এখন পর্যন্ত তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।

কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামে গত দুইদিন ধরে ধরলা, দুধকুমার,তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আজ সোমবার সকাল থেকে পানি স্থিতিশীল রয়েছে। অন্যদিকে, তিস্তা নদীর পানি আজ সকাল থেকে কমে বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কিছুটা কমে লোকালয় থেকে নামলেও নিম্নাঞ্চল গুলোতে এখনও বন্যার পানি রয়েছে। ফলে এ নিয়ে জেলায় চতুর্থ ধাপের বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। আর এতেই এসব এলাকার মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে।

কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নিম্নাঞ্চল ছাড়িয়ে পানি এখন লোকালয়ে প্রবেশ করছে। 

তৃতীয় দফায় পানি বাড়ছে পদ্মায়। ফলে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের দুই ইউনিয়নের ৩৬ গ্রামের আনুমানিক ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তলিয়ে গেছে প্রায় ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমির মাষকলাই ও মরিচ ক্ষেত।

সুপার টাইফুন ইয়াগির প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে মিয়ানমারে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। বন্যায় এখন পর্যন্ত ৩৬ জন নিহত হয়েছেন।

লক্ষ্মীপুরে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে বিভিন্ন সড়ক থেকে পানি কিছুটা নামলেও এখনো ঘরবাড়ি তলিয়ে রয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন বানভাসি মানুষ। জেলায় এখনো পানিবন্দি ১০ লাখ মানুষ। পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবাও পাচ্ছেন না অনেকে। বাড়ছে পানিবাহিত নানা রোগব্যাধি।

বন্যাকবলিত এলাকার জনজীবন স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত যুবদল মানুষের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছেন যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না। আজ বৃহস্পতিবার ফেনী জেলায় বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণকালে তিনি এ কথা জানান।

ভারতীয় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে ফেনীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়। এতে জেলার ৬টি উপজেলা প্লাবিত হয়ে ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। অনেকেই জোয়ারের পানিতে ভেসে যান।

দেশের পূর্বাঞ্চলের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। কয়েক স্থানে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হলেও অধিকাংশ জায়গা খাদ্য এবং মানবিক সংকট আরও তীব্র হয়েছে।