যান চলাচল শুরুর আগ মুহূর্তে নাম নিয়ে বিতর্ক

.
আব্দুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৪ | ০০:২২
যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার আগ মুহূর্তে চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নাম নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়েটি চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে করতে অনুমোদন দিয়েছিল গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। তবে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এ নাম রাখা হয়নি। এক্সপ্রেসওয়েটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার আগে ট্রাফিক নির্দেশনা দিয়ে যে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে তাতে লেখা হয়েছে– ‘চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’।
এ নিয়ে নাগরিক সমাজের একটি পক্ষ বলছে, চট্টগ্রামের স্বার্থ নিয়ে সব সময় সোচ্চার ছিলেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। দলমত নির্বিশেষে তাঁর জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাঁর নাম পাল্টানো কাম্য নয়। কেউ কেউ রাষ্ট্রীয় স্থাপনার নামকরণ নিয়ে রাজনীতি ঠেকাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নীতিমালা করা উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন। অবশ্য চট্টগ্রামে নাম পরিবর্তনের এই রাজনীতি নতুন নয়। এর আগে ক্ষমতার পালাবদলে এমএ হান্নান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং জিয়া স্মৃতি কমপ্লেক্সকে স্বাধীনতা কমপ্লেক্সে পরিবর্তন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের নাম পরিবর্তনেরও দাবি তুলেছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
চার হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এক্সপ্রেসওয়েটি গত বছরের ১৪ নভেম্বর উদ্বোধন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই বছরের ১৩ অক্টোবর তিনটি প্রকল্পের নামকরণের সুপারিশ করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। পরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে বায়েজিদ সংযোগ সড়কটি (লুপ রোড) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের নামে এবং বাকলিয়া এক্সেস রোড তৎকালীন সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের বাবা জানে আলম দোভাষের নামে করার প্রস্তাব অনুমোদন করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
এদিকে সরকার পতনের পর সিডিএতে আওয়ামী লীগপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। কার্যালয়ে আসছেন না আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য সিডিএ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছও। এ অবস্থায় ট্রাফিক নির্দেশনা দিয়ে স্থাপনায় নাম পরিবর্তন নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি কোনো কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে সিডিএ সচিব রবীন্দ্র চাকমা বলেন, ‘আমি যোগদান করেছি মাত্র এক সপ্তাহ হয়েছে। এ বিষয়ে দাপ্তরিক কোনো সিদ্ধান্তের কথা আমার জানা নেই।’ তিনি প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বলেন। তবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
সিডিএর কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দাপ্তরিক কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও একটি পক্ষ থেকে লুপ রোড ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নাম পরিবর্তনের দাবি উঠেছে।
জানতে চাইলে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)-টিআইবির চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘আমি কারও নাম রাখা না-রাখা নিয়ে কিছু বলব না। স্থাপনার নাম নিয়ে আমাদের দেশে বিতিকিচ্ছিরি ব্যাপার হয়। এখন জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রের দায়িত্বে আছে। তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, এই নামকরণের রাজনীতি বন্ধে যেন জাতীয় নীতিমালা তৈরি করা হয়।’
দেশের একজন একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গায়ের জোরে নাম পরিবর্তন কোনোভাবে কাম্য নয়।
- বিষয় :
- পরিবর্তন