ভাই কঙ্কাল হলেও আঙুলে রুপার আংটি দেখে চিনতে পারব

জাকির হোসেন
বিশেষ প্রতিনিধি, রূপগঞ্জ থেকে
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৪ | ০১:১৬ | আপডেট: ২৭ আগস্ট ২০২৪ | ০৬:০২
জটলার মধ্যে এক যুবকের চোখের কোনা গড়িয়ে অশ্রু পড়ছিল। স্বজনের খোঁজে যারা গাজী টায়ার কারখানার সামনে ভিড় করছিলেন, সেখানে নীরবতা ভেঙে ওই যুবক বলছিলেন, ‘আমার ভাইরেও পাচ্ছি না। ওর ডান হাতে রুপার আংটি ছিল। কঙ্কাল হলেও ভাইরে পাব তো? আংটি দেখেই ভাইকে চিনতে পারব। এই যে আমার ভাইয়ের ছবি। এই ওর আইডি কার্ড। আপনারা খবর পেলে জানাবেন, প্লিজ। কোনোভাবে দেখেন লাশটা পাই কিনা।’
কথা বলে জানা গেল, যুবকের নাম জাকির হোসেন। তাঁর ভাই মনির হোসেন গাজী টায়ার কারখানায় ঢুকে ‘নিখোঁজ’ হয়েছেন।
তিনি সমকালকে বলেন, মনিরের দুই ছেলে, এক মেয়ে। যে কারখানায় আগুন লেগেছে, সেখানে পলিশ ইউনিটে চাকরি করতেন মনির। তাঁর গ্রামের বাড়ি সিলেটের সুনামগঞ্জ সদরের আমপাড়ায়। রূপগঞ্জে পরিবার নিয়ে থাকতেন। আগুন লাগার খবর পেয়ে রোববার রাত ১০টার দিকে কারখানায় যান, এর কিছু সময় পর থেকে তাঁর মোবাইল বন্ধ।
ছোট ভাইয়ের খোঁজ না পেয়ে যাত্রাবাড়ী থেকে রূপসীতে যান জাকির হোসেন। নিখোঁজদের অন্য স্বজনের মতো এলাকায় বিভিন্ন হাসপাতালেও ভাইকে খুঁজে বেড়ান তিনি।
ছেলে আলী নূরের সন্ধানে নাতিকে নিয়ে কারখানার সামনে আহাজারি করছিলেন লিলি বেগম (৬৫)। তিনি বলেন, স্বামী নেই। আমার ছেলে আর নাতি-নাতনি নিয়ে বেঁচে আছি। অনেকে বলেছে, ছেলে কারখানার ভেতরে ঢুকেছিল। এর পর আর খবর নেই। ওর কিছু হলে আমাদের বাঁচার জায়গা নেই।
নূরের সঙ্গে রোববার রাতে কারখানায় ঢুকেছিলেন মো. জুয়েল। তিনি সমকালকে বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে রাতে ভিডিও করতে নূর আর আমি ঢুকেছিলাম। তখন ৫০০ থেকে ৬০০ লোক কারখানার মধ্যে ছিল। সবাই লুটপাট করছিল। আমি কোনোমতে জানটা নিয়ে ফিরতে পেরেছি।
বোনজামাই মো. সাজেনের খোঁজে কারখানার সামনে যান আলামিন শিকদার। তিনি বলেন, সাজেন অটোরিকশাচালক। রোববার রাত ২টা পর্যন্ত তাঁর ফোনে কল যাচ্ছিল। এর পর বন্ধ পাওয়া যায়।
সাজেদার আহাজারিতে আশপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠছিল। ভাই নাহিদ হোসেনের খোঁজে তিনি রূপসীতে এসেছেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, নাহিদ রূপগঞ্জে একটি ব্যাটারি কোম্পানিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। বন্ধু আমানুল্লাহর সঙ্গে গাজীর কারখানায় ঢোকার পর থেকে দু’জনেরই খোঁজ নেই। শরীয়তপুরের জাজিরায় তাদের বাড়ি। সাজেদার সঙ্গে বসবাস করতেন নাহিদ। বড় বোন আর মায়ের আদরে তাঁকে লালন-পালন করতেন সাজেদা। রোববার সকালে গ্রামের বাড়ি থেকে রূপগঞ্জে এসেছিলেন নাহিদ।
- বিষয় :
- আগুনে নিহত