পলিসি বকেয়া ২ কোটি টাকা
বীমার টাকা পেতে পদে পদে হয়রানি গ্রাহকের

ফাইল ছবি
নীলফামারী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৪ | ২১:০৪
পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের নীলফামারীর সৈয়দপুর শাখায় জীবন বীমার পলিসি করেছিলেন মুজিবুর রহমান। মেয়াদ পূর্ণ হয় ২০২০ সালে। প্রতিষ্ঠানটি মুজিবুর রহমানের প্রিমিয়ামের রসিদের সব কাগজ ও দলিলপত্র নিয়ে নেয়। বীমার পাওনা টাকা কবে পেতে পারেন, এ বিষয়ে তাঁকে সঠিক কোনো তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। চার বছর অফিস ঘুরেও টাকা পাননি। একই অবস্থা এ শাখার প্রায় ৩ হাজার গ্রাহকের। শুধু তাই নয়, এখান থেকে শাখা অফিসও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
গ্রাহকরা স্থানীয় কমিশন এজেন্ট মোমিনুল ইসলামের বাড়িতে প্রতিনিয়ত হানা দিচ্ছেন। এ জন্য তিনি বাড়িতে থাকতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে গত ২০ জুলাই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ ভূঁইয়া, হিসাব কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন, বগুড়া অঞ্চলের প্রধান ফরিদ আহমেদ ও রংপুর অঞ্চলের প্রধান মুকসেদ আলীকে আসামি করে পাঁচজন শীর্ষ কর্মকর্তার নামে নীলফামারী আদালতে মামলা করেছেন।
মোমিনুল ইসলামের ভাষ্য, ২০০৫ সালের শেষের দিকে তাঁর পরিচিত একজনের মাধ্যমে কোম্পানির সেমিনারে অংশ নেন। তখন কোম্পানির কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কমিশন এজেন্ট হতে নানা প্রলোভন দেখান। তাদের কথায় এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে রাজি হয়ে যান। তাঁর হাত ধরে ৩ হাজার গ্রাহক বিভিন্ন বীমা পলিসি খোলেন। শুরুতে কয়েকজন মেয়াদ শেষে মুনাফাসহ টাকা পেলেও পরে আর কাউকে টাকা দেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে শাখা অফিসও রাতারাতি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গ্রাহকদের জানানো হয় রংপুর বিভাগীয় অফিসে যোগাযোগ করতে। সেখানে যোগোযোগ করার পর রসিদসহ প্রয়োজনীয কাগজপত্র নিয়ে নেন তারা। কিন্তু টাকা পাননি কেউ। এখন সবাই তাঁর কাছে এসে বীমার টাকা দাবি করছেন। গ্রাহকের চাপে তিনি এখন বাড়িছাড়া।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সৈয়দপুর শাখায় ৩ হাজার গ্রাহকের প্রায় ২ কোটি টাকার বীমা পলিসি রয়েছে। সবারই মেয়াদ শেষ হয়েছে। বীমা দাবির টাকা পেতে কোম্পানির পেছনে ঘুরছেন তারা। টাকা উদ্ধারের আশায় প্রথমে জেলা অফিস, পরে রংপুর বিভাগ এবং সর্বশেষ কোম্পানির প্রধান অফিসে ধরনা দেন। কাগজপত্রও জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু টাকা পাননি কেউ।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মেরিনা বেগম ও হুসনে জানান, সংসার থেকে খরচ বাঁচিয়ে বীমা করেছিলেন তারা। টাকা জমানোর মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। এই অফিস সেই অফিস ঘুরছেন; কিন্তু টাকা পাচ্ছেন না। কবে পাবেন অফিস থেকে সেই কথাও কেউ বলছেন না।
এ বিষয়ে কথা বলতে বীমা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ ভূঁইয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। কিন্তু বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। রংপুর বিভাগের ব্যবস্থাপক ফরিদ আহম্মেদ সরকারের মোবাইল ফোনেও একাধিকবার কল দেওয়া হলেও সাড়া মেলেনি।