ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

বারোমাসি তরমুজে কৃষকের মুখে হাসি

বারোমাসি তরমুজে  কৃষকের মুখে হাসি

পাঁচবিবি উপজেলার ভাড়াহুত এলাকার ফসলের ক্ষেতসংলগ্ন সড়কে বিক্রির উদ্দেশ্যে রাখা তরমুজ সমকাল

জয়পুরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৪ | ২৩:৩৬

তরমুজ সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত বাজারে পাওয়া যায়। এখন বর্ষার শেষেও জয়পুরহাটের বিভিন্ন এলাকায় বাঁশের মাচায় শোভা পাচ্ছে রংবেরঙের তরমুজ। বাজারে বারোমাসি এ তরমুজের চাহিদা থাকায় কৃষকদের মধ্যেও এ ফল আবাদে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ৩৮ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। সদরে ৩ হেক্টর, পাঁচবিবিতে ১৫ হেক্টর, আক্কেলপুরে ৭ হেক্টর, ক্ষেতলালে ৮ হেক্টর ও কালাই উপজেলায় ৫ হেক্টর জমিতে বাঁশের মাচায় তরমুজ চাষ হয়েছে।
জয়পুরহাটে তরমুজ আবাদের শুরুটা খুব বেশি দিনের নয়। ২০১৮ সালে পাঁচবিবি উপজেলার ভারাহুত গ্রামের কৃষক আবু মুসা পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের আর্থিক ও রুরাল ডেভেলপমেন্ট মুভমেন্টের কারিগরি সহায়তায় এ ফল আবাদ শুরু করেন। তিন শতক জমিতে বাঁশের মাচায় তরমুজ আবাদ করতে খরচ পড়ে ৫ হাজার টাকা। ওই বছরই ২৪ হাজার টাকায় উৎপাদিত তরমুজ বিক্রি করেছিলেন। এর পর তাঁর দেখাদেখি অন্যরাও ঝুঁকে পড়েন তরমুজ চাষে। যাদের আগে কিছুই ছিল না, তরমুজ চাষ করে তারা এখন আর্থিকভাবে সচ্ছল। 
কৃষক আবু মুসা বলেন, এবার সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলন ভালো হলে বিঘায় ৮০ থেকে ১০০ মণের ওপর তরমুজ হবে। দাম ভালো থাকলে এক লাখ থেকে সোয়া লাখ টাকায় বিক্রি করা যাবে। 
ফরিদুল ইসলাম দুই বিঘা জমিতে তরমুজ আবাদ করেছেন। বছরের ৯ মাস এ ফল আবাদ করা যায়। শীত মৌসুম এলে এসব জমিতে আলু বুনবেন। ধান ও আলুর এ এলাকায় তরমুজ চাষেই বেশি লাভ হচ্ছে। কৃষক মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, ধান-আলু বছরে তিনবার বিক্রি করা যায়। তরমুজ ৯ মাস। কাজেই এ ফলে অভাব কী, তা বোঝা যায় না।  
জয়পুরহাট সদর, পাঁচবিবি, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর উপজেলার ভূতগাড়ি, ভারাহুত, শিরট্টি, গোড়না, জালালপুর ও নওটিকা, ভাসিলার মোড়সহ আশপাশের মাঠ ঘুরে কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরের ৯ মাস বাঁশের মাচায় তরমুজ আবাদ করা হয়। চারা রোপণের ৫০ দিনের মধ্যে ফলন আসে। অন্য ফসলের তুলনায় এ ফল বিক্রি করে তিন গুণ লাভ পাওয়া যায়। এ কারণে ভূতগাড়ী ও নওটিকা এলাকা তরমুজ বেচাকেনার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। পাইকারি বাজারে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। 
বগুড়ার মোকামতলা থেকে আসা পাইকার আব্দুল মান্নান বলেন, আড়াই বছর ধরে এখানকার বাজার থেকে তরমুজ নিয়ে যাই। গড়ে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা মণ (৪০ কেজি) দরে তরমুজ কিনেছি। এলাকায় নিয়ে ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করব। 
কালাই বাজারে খুচরা তরমুজ বিক্রেতা শামসুল বলেন, খুচরা ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। অন্য ফলের চেয়ে তরমুজ বিক্রি হয় বেশি। 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ রাহেলা পারভিন বলেন, মাচা পদ্ধতিতে আবাদ করা তরমুজ পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে রঙের ফাঁদ, সেক্স ফেরোমন ট্যাব ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এতে বিষমুক্ত ফল পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া উৎপাদন খরচও কম পড়ে। ফলে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে কৃষক।  

আরও পড়ুন

×