ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না হাজারো মানুষ

চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না হাজারো মানুষ

ছবি: সংগৃহীত

 নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ০৫:০০

স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে পাঁচটি পদে কোনো জনবলই নেই। বন্ধ রয়েছে এক্স-রে, রক্তসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এতে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাজারো মানুষ।

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার শিকারীপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে আসা শিশু, নারী, পুরুষ, বৃদ্ধরা প্রতিদিন চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে ক্ষোভ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন হাজারো মানুষ। কিন্তু এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই। জনবল সংকট নিরসনে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় সচেতন মহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে। নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা জানিয়েছেন, তিনি বারবার শিকারীপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের জনবল সংকটের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো সমাধান হচ্ছে না।

গতকাল সোমবার ওই এলাকায় গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও চিকিৎসা কেন্দ্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিকারীপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সেবা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের অসন্তুষ্টি বিরাজ করছে। সপ্তাহে এক দিন রোগীর চিকিৎসা দিতে উপজেলা থেকে একজন চিকিৎসক আসেন এই কেন্দ্রে।
হাগ্রাদী এলাকার আবু তালিব জানান, এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চাহিদামতো চিকিৎসা পাচ্ছেন না অসহায় ও দরিদ্র মানুষ।

চিকিৎসা নিতে আসা রহিমা বেগম জানান, তিনি গরিব মানুষ। চিকিৎসা নিতে এসে দেখেন, নারী চিকিৎসক নেই। এতে নারীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। ‘এই যদি হয় একটি সরকারি হাসপাতালের অবস্থা, তাহলে আমরা গরিবরা কই যাইতাম।’ যোগ করেন রহিমা।

হাত ভেঙে যাওয়ায় চিকিৎসা নিতে আসা শফিক মিয়া জানান, এই হাসপাতালে এক্স-রে, রক্তসহ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে না। এ কারণে বাধ্য হয়ে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অতিরিক্ত সময় ও টাকা দিয়ে পরীক্ষা করেছেন। তাদের এ ভোগান্তি যেন দেখার কেউ নেই।

পরিবেশ ও সমাজকর্মী মোস্তাক আহমেদ বলেন, চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এ অঞ্চলের মানুষ। হাসপাতালটিতে জনবল সংকট দূর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। কারণ এভাবে একটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র অচল অবস্থায় পড়ে থাকতে পারে না। কোথায় দুর্বলতা রয়েছে, তা খুঁজে বের করতে হবে।

শিকারীপাড়া ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক (এফপিআই) রফিকুল ইসলাম বলেন, এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে এখনও পাঁচটি পদে কোনো জনবলই নেই। পদগুলো হচ্ছে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো), পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) ফার্মাসিস্ট, অফিস সহায়ক (এমএলএসএস) ও আয়া।

নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা বলেন, ঢাকা জেলায় উপজেলা স্বাস্থ্যসেবার ক্যাটেগরিতে তারা সবচেয়ে পিছিয়ে থাকেন। কারণ তাদের পর্যাপ্ত জনশক্তির অভাব রয়েছে। তিনি জানান, যেখানে উপজেলায় ১১ জন সেকমো কর্মরত থাকার কথা, সেখানে রয়েছে মাত্র দু’জন। পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা থাকার কথা ১৪ জন, আছেন পাঁচজন। ফার্মাসিস্ট ১১ জনের জায়গায় আছে মাত্র একজন।

এমএলএসএস ১১ জনের স্থলে আছেন চারজন এবং আয়া রয়েছেন দু’জন। এ কারণে গ্রাম পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। জনবল সংকটের বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে জানিয়ে তিনি আশা প্রকাশ করেন, যদি সরকার নিয়োগ নিশ্চিত করে, তাহলে সমস্যা থাকবে না। 

আরও পড়ুন

×