ধারণক্ষমতার চার গুণ যানবাহন, ভোগান্তি

জয়পুরহাটের পাঁচুর মোড়ে বৃহস্পতিবার তিন চাকার যানবাহনের দখলে সড়ক সমকাল
শাহারুল আলম, জয়পুরহাট
প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৩:০৫
‘যানজটের কারণে চলাচল করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। বিকেল ৪টায় শহর থেকে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যাওয়ার জন্য অটোরিকশায় উঠেছি। বাটারমোড়ে আসতে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা সময় লেগেছে। জরুরি কাজ করতে গেলে রাস্তায় বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এত অটোরিকশা শহরে চলাচল করছে। প্রতিকারের জন্য কোনো পদক্ষেপ দেখা যায় না।’ গত বৃহস্পতিবার কথাগুলো বলছিলেন জয়পুরহাট শহরের বাগিচাপাড়ার বাসিন্দা হাফিজুর রহমান।
অতিরিক্ত যানবাহন চলাচল করায় জয়পুরহাট এখন যানজটের শহরে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে প্রচণ্ড গরমে সকালে অফিস শুরুর সময় শহরের তিন কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিতে যানজটের কারণে সময় লাগছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এরপর দীর্ঘদিন ধরে চলা চার লেন সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় দিনদিন দুর্ভোগের মাত্রা বেড়েই চলেছে। তবে পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি, শহরের যানজট নিরসনে কাজ চলমান রয়েছে।
পাঁচ উপজেলার সমন্বয়ে জয়পুরহাট জেলা। তবে এক সড়কের শহর জয়পুরহাট। জেলা শহরের প্রধান যানবাহন ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা। তবে দিন দিন এ ধরনের যানের সংখ্যা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে। উপজেলা থেকে জেলা শহরে আসতে সাধারণ মানুষকে শহরের প্রবেশ মুখে যানজটে পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এতে মানুষের ভোগান্তিও ক্রমেই বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শহরে এক হাজারের কিছু বেশি যানবাহন চলাচলের অনুমোদন থাকলেও চলছে চার হাজারের বেশি।
কালাই থেকে শ্বাসকষ্টের রোগী নিয়ে জেলা সদরের হাসপাতালে এসেছিলেন বেলাল হোসেন। তিনি বলেন, বাসস্ট্যান্ড থেকে অটোতে করে হাসপাতালে যেতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট। সেখানে যানজটের কারণে সময় লেগেছে প্রায় ৪০ মিনিট। এমনিতেই শ্বাসকষ্টের রোগী, তারপর যানজট। সময়মতো হাসপাতালে যেতে না পারায় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারতো। এর থেকে পরিত্রাণ চান তারা।
জানা গেছে, জয়পুরহাট শহরের প্রধান সড়কের বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে হাসপাতাল মোড়, সিও কলোনি, আমতলী, বাটার মোড়, পাচুরমোড়, রেলগেট, মাছুয়া বাজার পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার পথ তীব্র যানজটে দুর্ভোগে পড়েছে শহরবাসী। এ ছাড়া শহরের ভিতরে মূল সড়কের দু’পাশে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল পার্কিং করার কারণে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে। এর থেকে পরিত্রাণ চান শহরের বাসিন্দারা।
পেটের দায়ে প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও রিকশা চালানো অব্যাহত রেখেছেন চালক বেলাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘ঘরে একটু খাবার থাকলে আজ এত যানজটের মধ্যে রিকশা চালাতে আসতাম না। যানজটের কারণে আগের চেয়ে আয় অনেক কমে গেছে।’
শহরের বাইর থেকে প্রাইভেট পড়তে আসা স্কুলছাত্র আবু তাহের বলেন, গত দু’বছর ধরে সপ্তাহে চার দিন এ শহরে প্রাইভেট পড়তে আসতে হয়। প্রতিদিনই কমবেশি যানজটে পড়ে সময় অপচয় হচ্ছে। মনে হচ্ছে, এ শহরের যানজট তার প্রতিদিনের সঙ্গী। যানজটে পড়ে সময় অপচয়ের কারণে লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক জামিরুল ইসলাম বলেন, একটি মাত্র সড়ক, যেখানে ছোট-বড় মিলে এক হাজারের মতো যানবাহন ভালোভাবে চলাচল করতে পারবে। অথচ চার হাজারেরও বেশি যানবাহন চলাচল করে। এতে করে যানজট লেগেই আছে। নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তারপরও যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ সাধ্যমতো কাজ করছে।
পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান বলেন, শহরে আড়াই কিলোমিটার চার লেন রাস্তার কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য তাগাদা দেওয়া হয়েছে। যানজট নিরসনে পৌরসভা থেকে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে কমিউনিটি পুলিশও কাজ করছে। পৌর এলাকায় বৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা রয়েছে ১১শ। সেখানে যানবাহন চলাচল করে চার হাজারের অধিক। অবৈধ যানবাহনের কারণে শহরে এত যানজট। এসব অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে অচিরেই অভিযান চালানো হবে।
- বিষয় :
- জ্যাম