সীমান্তে সতর্কতা, ইমিগ্রেশনে নজরদারি জোরদার

চুনারুঘাটের বাল্লা সীমান্তে টহলরত বিজিবি সদস্যরা
নুর উদ্দিন সুমন, চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ)
প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২০:৪১
দেশে চলমান পরিস্থিতিতে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ৪৯ কিলোমিটার সীমান্ত অঞ্চলে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এদিকে বাল্লা ইমিগ্রেশনে জোরদার করা হয়েছে নজরদারি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর শীর্ষ পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরা সীমান্ত অতিক্রম করে পালিয়ে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া দেশত্যাগী দুষ্কৃতকারীরা পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে এসব অঞ্চলে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েনসহ বাড়ানো হয়েছে টহল। এ ছাড়া চুনারুঘাট বাল্লা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টেও বাড়ানো হয়েছে নজরদারি।
বিজিবির সংশ্লিষ্টরা জানান, আগের চেয়ে সীমান্ত এলাকায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। জোরদার করা হয়েছে টহল। যে কোনো ধরনের অনুপ্রবেশ ও অবৈধভাবে দেশত্যাগের চেষ্টা প্রতিহত করতেই এ তৎপরতা। সীমান্ত এলাকায় কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। উপজেলার সীমান্ত এলাকায় সড়কগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এসব চলাচলের ক্ষেত্রে বিজিবির জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে মানুষকে।
সম্প্রতি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সীমান্ত দিয়ে অপরাধীরা যাতে ভারতে প্রবেশ করতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদের তৎপরতা বাড়িয়েছে। বিজিবির টহলও জোরদার করা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ৫৫ বিজিবির সহকারী পরিচালক ইয়ার হোসেন।
উপজেলার সীমান্ত পাহারায় গুইবিল, চিমটিবিল, বাল্লা, রেমা ও কালেঙ্গায় বিজিবির সীমান্ত ফাঁড়ি রয়েছে। এসব ফাঁড়ি থেকেই সীমান্তে টহল পরিচালনা করা হয়। ৮ আগস্ট থেকে উপজেলার সীমান্ত টহল জোরদার করে বিজিবি, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, উপজেলার অধিকাংশ সীমান্ত রেমা ও কালেঙ্গা পাহাড় এবং চা বাগান ঘেরা। বিজিবির সতর্ক অবস্থানের পরও সীমান্ত চোরাচালান চক্রের সদস্যরা এসব এলাকার দুর্গম স্পট দিয়ে অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপার ও চোরাই মাল পরিবহনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। চোরাকারবারি চক্রের এসব পথ ধরে দালালদের মাধ্যমে দুষ্কৃতকারীরা দেশত্যাগের চেষ্টা করতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বাল্লা বিজিবির কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার দাউদ হোসেন বলেন, ‘আমরা সবসময়ই সীমান্তে সতর্ক অবস্থায় রয়েছি। এ ক্ষেত্রে অসতর্কতার কোনো সুযোগ নেই। পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন নির্দেশনা অনুসারে সীমান্তে বিজিবির টহল আরও জোরদার করা হয়েছে। প্রতি ৬ ঘণ্টা পর পরই টহল পরিবর্তন হয়ে নতুন টহল দল যাচ্ছে সীমান্তে। আমরা কড়া নজরদারিতে রেখেছি সীমান্ত অঞ্চল। পাহাড়ি অঞ্চলেও টহল জোরদারভাবে চলছে। এ সীমান্ত দিয়ে কোনো অপরাধী পারাপারের খবর নেই এখন পর্যন্ত। এ ধরনের কোনো সুযোগই দেবে না বিজিবি।’
ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জানান, সীমান্তে কোনো উত্তেজনা নেই। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তবে দেশের ভেতর থেকে অপরাধী ও দুষ্কৃতকারীদের পার্শ্ববর্তী দেশে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে টহল আরও জোরদার করা হয়েছে।
৩ নম্বর দেউরগাছ ইউনিয়নের চেয়্যারম্যান মুহিতুর রহমান জানান, সীমান্ত শান্ত থাকলেও ব্যাপক হারে বেড়েছে মাদক পাচার। মাদক ও চোরাচালান বন্ধে আরও কঠোর হতে হবে সীমান্ত রক্ষীদের।
হবিগঞ্জ ৫৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলতে একাধিকবার তাঁর মোবাইল নম্বরে কল করে সাড়া মেলেনি। তবে ব্যাটালিয়নের এক কর্মকর্তা জানান, বিজিবি সদরদপ্তর থেকে সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছেন তারা। কেউ যাতে অবৈধ পথে ভারতে যেতে না পারে বা ভারত থেকে অবৈধভাবে দেশে ঢুকতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করা হবে।
বাল্লা বিজিবি কমান্ডার সুবেদার দাউদ হোসেন বলেন, জনবল বৃদ্ধি করে প্রতিটি টহল দলকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সামাল দিতে সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা পালনে সদা প্রস্তুত তারা।
বাল্লা ইমিগ্রেশন পুলিশের দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক নুর উদ্দিন জানান, ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। সর্বোচ্চ যাচাই-বাছাই করে তবেই ক্লিয়ারেন্স নিশ্চিত করা হচ্ছে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দ্বারা ইস্যুকৃত অনাপত্তিপত্র ছাড়া কেউ ভারতে যেতে পারবে না। তালিকাভুক্ত বা তালিকার বাইরে থাকা বিতর্কিত ও সন্দেহভাজনদের কোনোভাবেই ছাড় দেবে না ইমিগ্রেশন পুলিশ।