সিএমপি’র ডিসি, এসি ও ওসিসহ ২১ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা

লোগো
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ০৬:০৪
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের পর নির্যাতনের অভিযোগে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কর্মকর্তাসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলার দায়েরের আদেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন এ আদেশ দেন।
আদালতে মামলাটির আবেদন করেন লক্ষ্মীপুরর রায়পুর থানার চরবংশী এলাকার মোস্তফা বেপারীর ছেলে নজরুল ইসলাম। গত ১৮ জুলাই নগরীর কর্ণফুলী সেতু এলাকায় আন্দোলন চলাকালে তার ছোট ভাই নাজমুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তাকে নির্যাতন করে পুলিশ। তিনি সরকারি সিটি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র।
মামলার আসামিরা হলেন- সিএমপির দক্ষিণ জোনের সাবেক উপ-কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান, কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার অতনু চক্রবর্তী, কোতোয়ালী থানার সাবেক ওসি এস এম ওবায়েদুল হক, বাকলিয়া থানার সাবেক ওসি আফতাব হোসেন, কোতোয়ালী থানার পেট্রোল ইন্সপেক্টর (ট্রাফিক) মো. মিজানুর রহমান, এসআই মো. মেহেদী হাসান, রুবেল মজুমদার, রণেশ বড়ুয়া, গৌতম, বাকলিয়া থানার এসআই আবদুস সালাম, মো. মিজান, কনস্টেবল শাহজাহান, কামাল, মো. ইলিয়াছ। এছাড়াও অজ্ঞাত ৭ পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।
বাদীর আইনজীবী স্বরুপ কান্তি নাথ বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে কলেজছাত্র নাজমুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও নির্যাতন করা হয়। এছাড়া তাকে শিবির ট্যাগ দিয়ে মামলার আসামিও করা হয়। ২১ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হেফাজতে নির্যাতন আইনে মামলার আবেদন করেছেন ভুক্তভোগীর বড় ভাই। আদালত আবেদনটি গ্রহণ করে সিআইডিকে নিয়মিত মামলা রুজুর নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে এসপি মর্যাদার নিচে নয়, এমন কর্মকর্তাকে দিয়ে মামলাটি তদন্তের আদেশ দিয়েছেন। বাদী ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতেরও আদেশ দিয়েছেন আদালত।’
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৮ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বন্ধুদের সাথে নাজমুল হোসেন বাকলিয়া থানার কর্ণফুলী সেতু এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়। পরে পুলিশ ছাত্রদের ওপর অতর্কিতভাবে লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল নিক্ষেপ এবং রাবার বুলেট ছোঁড়ে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে সুস্থ অবস্থায় নাজমুলকে আটক করে শারিরীক আঘাত করতে করতে পুলিশ বক্সে নিয়ে যায়।
এরপর পুলিশ সদস্যরা লোহার স্টিক, বক্সে থাকা স্ট্যাম্প দিয়ে ভিকটিমকে বেধড়কভাবে সারা শরীরে শিবির বলে পেটাতে থাকে। পরে নাজমুলকে পুলিশের একটি গাড়িতে করে প্রথমে চান্দগাঁও এবং আধঘণ্টা পর কোতোয়ালী থানায় নেওয়া হয়। গাড়ি থেকে নামানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনজন এসআই ও একজন কনস্টেবল ‘শিবির আনা হয়েছে’ এবং ‘আন্দোলন করো মজা বুঝবে’ বলে উল্লাস করে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুসি মারতে থাকে।
পরে থানার দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে নিয়ে ‘মজা কি এখনই বুঝবে’ বলে উল্লাস করে নাজমুলের দুই হাত উপরে তুলে দেওয়ালমুখী করে দাঁড় করিয়ে কাঠের স্ট্যাম্প এবং পুলিশের ব্যবহৃত লোহার লাঠি দিয়ে পিঠ, কোমর ও দুই পায়ের উরুতে বেদম মারধর করে। এ সময় শিবিরকর্মী শিকার করতে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে ওই কলেজছাত্র জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর তাকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। কিন্তু মেডিকেলে না নিয়ে তাকে আবারও কোতোয়ালী থানায় নেওয়া হয়। ওইদিন বিকেলে বাকলিয়া থানা পুলিশের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়।
বাকলিয়া থানা পুলিশও তাকে শিবিরকর্মী আখ্যা দিয়ে নির্যাতন করে। রাত ১১টার দিকে কলেজছাত্র নাজমুলের অবস্থার অবনতি হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা করানো হয়। পরে ১৯ জুলাই চিকিৎসাধীন নাজমুলকে ৮ নম্বর আসামি করে বাকলিয়া থানায় একটি মামলা করা হয়। যে মামলায় ১৪ দিন কারাগারে থাকার পর আদালত তাকে জামিনে মুক্তি দেন।
- বিষয় :
- সিএমপি