ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

রামুতে বৌদ্ধমন্দিরে হামলা

সাক্ষীর অভাবে থেমে আছে বিচারকাজ

সাক্ষীর অভাবে থেমে আছে বিচারকাজ

রামু বৌদ্ধমন্দির

ইব্রাহিম খলিল মামুন, কক্সবাজার ও খালেদ শহীদ, রামু

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ০৮:১০

রামুতে বৌদ্ধমন্দিরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ১৮ মামলার একটিরও বিচার শেষ হয়নি। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ইসলাম ধর্ম অবমাননার একটি ছবি ফেসবুকে ছড়ানোর পর রামু উপজেলার ১৯টি প্রাচীন বৌদ্ধমন্দির ও প্রায় ২৬টি বসতঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় মন্দির ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ঘরবাড়িতে। এর পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর উখিয়া, টেকনাফ, কক্সবাজার ও পটিয়ার বিভিন্ন বৌদ্ধমন্দিরে হামলা চালায় ও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা।

রামুতে বৌদ্ধ ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি ফিরলেও মুছে যায়নি মনের ক্ষত। হামলার ঘটনায় রামু, উখিয়া ও টেকনাফে ১৯টি মামলা করা হয়েছিল। এগুলোতে এজাহারভুক্ত ৩৭৫ জনসহ ১৫ হাজার ১৮২ জনকে আসামি করা হয়। এরপর আপসের মাধ্যমে একটি মামলা প্রত্যাহার করা হয়। ১৮টি মামলায় ৯৯৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় তদন্ত সংস্থা। কিন্তু সাক্ষীর অভাবে ১২ বছর ধরে আটকে আছে বিচারকাজ। 

অভিযোগ রয়েছে, হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী জড়িত বলে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকলেও তাদের আসামি করা হয়নি। এসব মামলার অধিকাংশ আসামি বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী। 

বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনের অভিযোগ, ন্যক্কারজনক এ ঘটনায় দায়ীরা কেউ শাস্তি পায়নি। এ ঘটনায় আটক হওয়া সবাই জামিনে মুক্ত। আবার ঘটনায় সরাসরি জড়িত অনেককে আসামি করা হয়নি। এ হামলায় বিভিন্ন দলের লোকজন অংশ নিয়েছিল। স্থিরচিত্র, ভিডিও ফুটেজে এর প্রমাণ মিলেছে। তদন্ত প্রতিবেদনেও এসব তথ্য রয়েছে।
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বৌদ্ধ তরুণ উত্তম বড়ুয়ার নামে একটি ফেসবুক আইডির মাধ্যমে কোরআন অবমাননার ছবি ছড়ানোর গুজব রটেছিল। তবে উত্তম বড়ুয়া নামে এমন কাউকে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

প্রতিবছরের মতো এবারও ২৯ সেপ্টেম্বর (আজ) বিভীষিকাময় রাত স্মরণে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সংগঠন আয়োজন করেছে সংঘদান ও শান্তি শোভাযাত্রার। প্রতিবছর এই দিনে বিচারের দাবিতে লোকজন জড়ো হন। 

এসব মামলা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরকার পক্ষে কাজ করেছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম। তিনি সমকালকে বলেন, সাক্ষীর অভাবে বিচার প্রক্রিয়া থমকে আছে। ১৮টি মামলার মধ্যে প্রায় এক হাজার জন আসামি ও ১৬০ জনের মতো সাক্ষী আছেন। মামলাগুলো বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন। দুটি মামলা বিশেষ তদন্তাধীন আছে। এসব মামলার সাক্ষীর সমন জারি করা হয়েছে অনেকবার। কিন্তু কেউ সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসেন না। অধিকাংশ সাক্ষী বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের। তারা অনীহা প্রকাশ করছেন। প্রয়োজনে সাক্ষীকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হতে পারে বলে জানান ফরিদুল আলম।

রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিপুল বড়ুয়া বলেন, আদৌ এসব মামলার বিচার হবে কিনা, সন্দেহ আছে। যারা হামলায় জড়িত, চোখের সামনে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বলেন, ‘এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে যে ঘোর আঘাত এসেছিল, সেটা সামলে সবাই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের চেষ্টা করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের অনুরোধ করব, সবাই যেন যার যার জায়গা থেকে আদালতকে সাহায্য করেন।’ রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের পরিচালক শীলপ্রিয় থের বলেন, বৌদ্ধ বিহারগুলোর ধ্বংস হয়ে যাওয়া সম্পদ ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। বিষয়টি স্মরণ করলে এখনও কান্না আসে।

আরও পড়ুন

×