নলছিটির ইউনিয়ন পরিষদ
চেয়ারম্যানরা আত্মগোপনে, কার্যালয় ঝুলছে তালা

ফাইল ছবি
নলছিটি (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২০:২৮
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নলছিটি উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা আত্মগোপনে চলে গেছেন। এতে দাপ্তরিক সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ৯ জন চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সামনে তালা ঝুলতে দেখা গেছে।
ইউপি চেয়ারম্যানরা মাসেরও বেশি সময় ধরে আত্মগোপনে থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পরিষদে সেবা নিতে আসা হাজারো মানুষ। এসব চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাদের দাবি, স্থানীয় কিছু লোকের বাধায় পরিষদে আসতে পারছেন না তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যানরা হামলা-মামলার ভয় ও নিজেদের নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা চিন্তা করে গা-ঢাকা দিয়েছেন। তাদের অনুপস্থিতিতে সেবাদানে স্থবিরতা নেমে এসেছে। সেবাবঞ্চিতদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ভৈরবপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হক বলেন, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে কারও সঙ্গে অন্যায় করিনি। তার পরও বারবার আমার কক্ষ তালা এবং শিকল দিয়ে বন্ধ করে রাখা হচ্ছে। পরিষদে বসতে পারছি না। প্রশাসনিক কর্মকর্তার কক্ষে বসে কাজ করতে হচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চেয়ারম্যানদের কক্ষে একাধিক তালা ঝুলছে। অফিস করছেন ইউনিয়ন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। চেয়ারম্যানদের কার্যালয়ের সামনে সেবাগ্রহীতার দীর্ঘ অপেক্ষা।
আত্মগোপনে থাকা চেয়ারম্যানরা হলেন– নাচনমহল ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম সেলিম, মগর ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক শাহীন, কুলকাঠি ইউপি চেয়ারম্যান এইচ এম আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, রানাপাশা ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান হাওলাদার, মোল্লারহাট ইউপি চেয়ারম্যান কে এম মাহবুবুর রহমান সেন্টু, ভৈরবপাশা ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হক, সিদ্ধকাঠি ইউপি চেয়ারম্যান কাজী জেসমিন আক্তার ও সুবিদপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল গফফার খান।
দপদপিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বাবুল মৃধা আওয়ামী সরকারের পতনের পর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এর পর থেকে তিনি নিয়মিত কার্যালয়ে বসে অফিস করছেন।
কুশঙ্গল ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন সিকদার নিজ নির্বাচনী এলাকায় আছেন। ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমও চালিয় যাচ্ছেন। তবে কার্যালয়ে বসছেন না।
সরকার পতনের পর সবশেষ উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায়ও কোনো ইউপি চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন না।
স্থানীয়রা বলেছেন, উপজেলার সব ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল পদ-পদবিদধারী নেতা বা সমর্থক ছিলেন। তারা ইউনিয়ন পরিষদে অনুপস্থিত থাকায় নাগরিক সেবা মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। জনগণ নানা প্রয়োজনে এসে তাদের না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। দিন দিন ভোগান্তির মাত্রা আরও বাড়ছে। ইউনিয়নভিত্তিক মাদক বিক্রিসহ অপরাধপ্রবণতাও বেড়ে চলেছে। গ্রাম্য সালিশ হচ্ছে না, ট্রেড লাইসেন্স, নাগরিক সনদ, ওয়ারিশ সনদ পেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আওয়ামীপন্থি বিনা ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের গেজেট দ্রুত বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে পরিষদ পুরোদমে সচল করার দাবি জানিয়েছে তৃণমূল বিএনপি নেতাকর্মী।
সুবিদপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল গফফার খান বলেন, আমি নিরাপত্তাজনিত কারণে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে বসছি না। তবে পরিষদসংলগ্ন আমার এনজিও অফিসে বসে যতটুকু সম্ভব সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, জনদুর্ভোগের বিষয়টি চিন্তা করেই সব ইউনিয়নে জন্মনিবন্ধন সেবা কার্যক্রম চালু রাখতে একজন করে কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সাময়িক কিছুটা দুর্ভোগ হচ্ছে। প্রশাসন জনসাধারণের পাশে আছেন। শিগগিরই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।
জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান বলেন, এ বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। শিগগির সিদ্ধান্ত আসবে।
- বিষয় :
- আত্মগোপন
- ইউপি চেয়ারম্যান
- দুর্ভোগ
- ঝালকাঠি
- নলছিটি