ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

দাকোপের কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়ন

চেয়ারম্যান আত্মগোপনে, সেবা পেতে ভোগান্তি

চেয়ারম্যান আত্মগোপনে, সেবা পেতে ভোগান্তি

ফাইল ছবি

দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৪ | ২০:১৮ | আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৪ | ২০:১৮

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দাকোপের কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মিহির কুমার মণ্ডল দেড় মাসেরও বেশি সময় আত্মগোপনে রয়েছেন। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা পরিষদে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে ঘুরেও সেবা পাচ্ছেন না। বিশেষ করে জন্মনিবন্ধন ও ওয়ারিশ সনদ নিতে না পেরে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। প্যানেল চেয়ারম্যানের মাধ্যমে কোনোমতে পরিষদের কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

হত্যা, চাঁদাবাজিসহ অন্তত পাঁচটি মামলার আসামি চেয়ারম্যান মিহির। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বর্তমানে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।

সরেজমিন জানা গেছে, চেয়ারম্যান মিহির মণ্ডল আত্মগোপনে থাকায় ইউনিয়নের বাসিন্দারা জন্মনিবন্ধন ও ওয়ারিশ কায়েম সনদ নিতে পারছেন না। এতে নিজেদের এবং সন্তানদের বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজসহ স্কুল-কলেজে ভর্তি-সংক্রান্ত কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে।

এ ছাড়া আর্থিক লেনদেন এবং উন্নয়নমূলক কার্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ইউনিয়নের বন লাউডোব গ্রামের গুণধর বিশ্বাসের ভাষ্য, একটি জন্মনিবন্ধন করাতে কিছুদিন ধরে পরিষদে আসছেন। কিন্তু চেয়ারম্যানকে না পাওয়ায় আজও তাঁর সন্তানের জন্মনিবন্ধন করাতে পারেননি। শুধু গুণধর নন, তাঁর মতো ইউনিয়নের বাসিন্দা প্রতীভা, মনিষা, কোহেলিকা মণ্ডল, মিজান ফরাজি, ফারুক গাজী, জুয়েল মণ্ডলসহ অনেকে এ ধরনের ভোগান্তি পোহাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে চেয়ারম্যান মিহির মণ্ডল এলাকায় ক্ষমতার অপব্যবহার, হুমকি-ধমকি, জমি দখল, নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলাসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। এসবের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে তাকে বিপদে পড়তে হয়েছে। ক্ষমতার দাপটে তিনি কাউকে মূল্যায়ন করতেন না। নির্বাচন এলে তিনি ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাঁর পক্ষে সমর্থন আদায় করতেন। এভাবে তিনি পরপর তিনবার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

জানা গেছে, থানায় চেয়ারম্যান মিহির মণ্ডলের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত পাঁচটি মামলা রয়েছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নিজেকে রক্ষায় তিনি আত্মগোপনে চলে গেছেন। কৈলাশগঞ্জ ইউপির সচিব মো. ইমরান হোসেন বলেন, চেয়ারম্যান এক মাসের বেশি সময় আসছেন না। তাঁর অনুপস্থিতিতে জন্মনিবন্ধন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর্থিক লেনদেনসহ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডও থমকে আছে।

নিজ পরিবারের সদস্যদের চারটি জন্মনিবন্ধন দেড় মাসেও করাতে পারেননি বলে জানান কৈলাশগঞ্জ ইউপির ১ নম্বর প্যানেল চেয়ারম্যান প্রবীর মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘জন্মনিবন্ধনের ব্যাপারে মানুষের হয়রানির কথা আর কী বলব! চেয়ারম্যান না থাকায় এলাকার উন্নয়নকাজ পরিচালনা করতে বেগ পেতে হচ্ছে।’

চেয়ারম্যান মিহির মণ্ডলের বিরুদ্ধে দাকোপ থানায় পাঁচটি মামলা হয়েছে বলে জানান ওসি মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে চাঁদাবাজি এবং ২০১৩ সালে হত্যা মামলা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন। তবে তিনি নতুন যোগদান করায় এগুলো কী অবস্থায় আছে, তা বলতে পারেননি।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চেয়ারম্যান মিহির মণ্ডলের মেবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসমত হোসেন বলেন, কৈলাশগঞ্জের চেয়ারম্যানের অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক অবগত আছেন। তবে এখন চেয়ারম্যানের জায়গায় কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার এখতিয়ার তাঁর নেই।

 

আরও পড়ুন

×