প্রকল্পেও কাটে না জলবদ্ধতা
বছরে ছয় মাস দুই স্কুলমাঠে থইথই পানি, অপরিকল্পিত সংস্কারে ৮শ শিক্ষার্থীর ভোগান্তি

বৃষ্টি হলেই কামিনী গঙ্গারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে যায়।
সনি আজাদ, চারঘাট (রাজশাহী)
প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪ | ২০:২৫
পুরো মাঠে পানি থইথই। কোথাও গোড়ালিসমান পানি, কোথাও হাঁটু পর্যন্ত। মাঠটি বছরের ছয় মাসই জলাবদ্ধ থাকে। এ কারণে মাঠে কোনো খেলাধুলা হয় না। জলাবদ্ধতা নিরসনে গত পাঁচ বছরে ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ছয়টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। তবুও জলাবদ্ধতা নিরসন হয়নি।
এ চিত্র রাজশাহীর চারঘাটের নন্দনগাছী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় এবং কামিনী গঙ্গারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
জনপ্রতিনিধিদের খেলার মাঠ ও নালা বন্ধ করে নন্দনগাছী উচ্চ বিদ্যালয় পুকুর খনন করে বাণিজ্য, অপরিকল্পিত সংস্কারকাজের জন্য এ অবস্থা বলছেন স্থানীয় বাসিন্দা আতাউর রহমান। তাঁর ভাষ্য, দুই বিদ্যালয়ের মাঠ যেন টাকা কামানোর মেশিন। প্রতিবছর নানা প্রকল্প দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা হয়। কিন্তু জলাবদ্ধতা দূর হয় না। পরের বছর আবার প্রকল্প নেওয়ার জন্য ইচ্ছে করেই জলাবদ্ধতা নিরসন করে না বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
নিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের পাশে বিদ্যালয় দুটির অবস্থান। শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৮০০। মাঠে স্থায়ী জলাবদ্ধতার পাশাপাশি একটু বৃষ্টিতেই অফিস ও ক্লাসরুম হাঁটুপানিতে পরিণত হচ্ছে। কাদাপানির ওপর দিয়েই শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে আসা-যাওয়া করেন।
কামিনী গঙ্গারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক ইঞ্চি জায়গাও শুকনো নেই। দ্বিতীয় তলার কয়েকটি রুমে গাদাগাদি করে চলছে ক্লাস। একতলার অফিস ও ক্লাসরুমের ভেতরে পানি ঢুকে নষ্ট হচ্ছে চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চসহ জরুরি কাগজপত্র। নন্দনগাছী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠেও হাঁটুপানি। পানি মাড়িয়ে ক্লাসরুমে প্রবেশ করতে দুই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের শেষ নেই।
নন্দনগাছী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরের বছর আরও ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় মাঠের পাশের পুকুরপাড় বেঁধে সংস্কার করা হয়। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজার ও বিদ্যালয়ের মাঠ সংস্কারে আবারও ৭ লাখ ২৮ হাজার টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
নিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব খাতের বরাদ্দে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচে দুই বিদ্যালয়ের মাঠ সংস্কার করা হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮০ হাজার টাকায় মাঠের পাশের ড্রেন সংস্কার করা হয়। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে জলাবদ্ধতা নিরসনে আবারও রাজস্ব খাতের বরাদ্দ থেকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকায় মাঠের পাশে রাস্তা ও মাঠ সংস্কার করা হয়েছে। পাঁচ বছরে ১৯ লাখ ৮৮ হাজার খরচ করে সংস্কারকাজ করার পরেও বছরের ছয় মাস মাঠে জমে থাকে পানি। একটু বৃষ্টিতেই ক্লাসরুমে পানি ঢুকে সৃষ্টি হয় ভোগান্তির।
কামিনী গঙ্গারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলরুবা খাতুন বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই বিদ্যালয় ডুবে যাচ্ছে। ক্লাসরুম ও অফিসে পানি ঢুকছে। নন্দনগাছী উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুর সংস্কার করার পর থেকে এ অবস্থা। কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন জানিয়ে আশ্বাস ছাড়া আর কোনো কাজ হয়নি।
নিমপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, নন্দনগাছী উচ্চ বিদ্যালয় সামান্য লাভের জন্য পুকুর খনন করে ভাড়া দিয়ে পুরো এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি করেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
নন্দনগাছী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান আখন্দ শিবলী বলেন, বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্যই মাঠ ও পুকুর সংস্কার করেছি। কিন্তু পুকুরের পাশের কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দেওয়ায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। সংস্কারকাজে অনিয়ম হয়নি। জলাবদ্ধতা নিরসনের চেষ্টা করছি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমি নিজেই হাঁটুপানি মাড়িয়ে ওই বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছি। শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনই ভোগান্তি পোহাচ্ছে। স্থায়ী সমাধান চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।