ছাত্র আন্দোলনে হামলা
গোবিন্দগঞ্জের সাবেক এমপি কালামসহ ৪৯ জনের নামে মামলা

আবুল কালাম আজাদ, মুকিতুর রহমান রাফি, শাকিল আলম বুলবুল।
গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৪ | ০৯:৫২ | আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৪ | ১১:৩৪
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদসহ ৪৯ জনের নামে মামলা করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০-২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে গোবিন্দগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী মামুন খান (২৭)। তিনি গোবিন্দগঞ্জ পৌরশহরের ৫নং ওয়ার্ডের বুজরুক বোয়ালিয়া (হীরকপাড়া) গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে।
মামলার আসামিরা হলেন- গাইবান্ধা-৪ গোবিন্দগঞ্জ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান আতাউর রহমান বাবলু, সাবেক মেয়র মুকিতুর রহমান রাফি, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মিয়া আসাদুজ্জামান হিরু, উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ফরহাদ আকন্দ, পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শাহিন আকন্দ, কামারদহ ইউপি চেয়ারম্যান তৌকির হাসান রচি, ইউপি সদস্য মিন্টু মিয়া, উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহবায়ক সাদ্দাম হোসেন, যুগ্ম-আহবায়ক বাবুল ইসলাম, পৌর যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম মাবিয়ার, জাহিদ ইসলাম, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসানুল শেখ সুমন, পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহবায়ক রেজা, রাফসান জানি স্বর্নাভ, উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য মাজেদুল ইসলাম মাহিন, ওয়ালিদ হাসান, উপজেলা শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ, সাগর ইসলাম ও উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য মুন্না খন্দকারসহ অন্যরা। এছাড়া মামলায় আরও ১৫০-২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মামলার বাদী মামুন খান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী। সারাদেশের মতো গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জেও কোটা সংস্কার আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
গত ১৭ জুলাই (বুধবার) বিকেল ৪টার দিকে গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার সাফিয়া আছাব বিপিএড কলেজ মাঠ থেকে বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনের ডাকে ৭০০-৮০০ ছাত্র-জনতা একটি প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে পৌরশহরে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার পথে রাজমতি সুপার মার্কেটের সামনে পৌঁছালে। পূর্বপরিকল্পনা মাফিক উল্লেখিত এজাহার নামীয় আসামীসহ ১৫০-২০০ জন অজ্ঞাতনামা আসামী লাঠি, লোহার রড, দেশীয় অস্ত্র, পিস্তল, রাম-দা, চাইনিজ কুড়াল, চা-পাতি, বার্মিজ চাকু, হকিস্টিক, ইট ও পাথরের টুকরা ভর্তি চটের ব্যাগ নিয়ে অতর্কিতভাবে নিরীহ আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়।
সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের নির্দেশে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুলের নেতৃত্বে এজাহার নামীয় আসামিরা আন্দোলনকারীদের হত্যার উদ্দেশ্যে মামুন খান, তাসিন, বাঁধন, ওয়ারিদ, শ্রাবণ, আকাশ, ওমর ফারুক, আবিদ হোসেন, ইজাজসহ ২০-২৫ জনের ওপর আক্রমণ করে।
এছাড়া ৪০-৪২ জন আন্দোলনকারীকে বেধড়ক মারধর করে গুরুতর জখম করা হয়। আসামীদের আক্রমণে রাব্বী মিয়া আকাশ, জারিফ সরকার তাহসিন, শ্রাবণ সরকার, তানভীর সরকার বাঁধনসহ অসংখ্য আন্দোলনকারীরা আহত হন। এসময় তারা আন্দোলনরত ছাত্র জনতার কাছে থাকা ৬টি স্মার্টফোন ও ৩টি বার ফোন ছিনিয়ে নেয়। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। মারপিট শেষে আন্দোলনকারীদের আবারও সুযোগমত পেলে মারধরের ভয়-ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসামীগণ ঘটনাস্থল ত্যাগ করে কুঠিবাড়ি উপজেলা চত্বরে চলে যান। পরে আহতরা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ শহরের বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়।
এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি আ ফ ম আছাদুজ্জামান বলেন, এক শিক্ষার্থী বাদী হয়ে ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১৫০-২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামলা দিয়েছে। যার মামলা নং ৭/৩৬১। মামলায় যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে, সরকার পতনের পর তাদের কেউই এলাকায় নেই। আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের জোর চেষ্টা অব্যাহত আছে।