ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে পকেটে রাখতেন পলক

বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে পকেটে রাখতেন পলক

পলক

আব্দুর রশিদ, সিংড়া (নাটোর) 

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৪ | ১২:৩৭ | আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৪ | ১২:৪৭

সিংড়ার বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিজের পকেটে রেখেছিলেন পলক। বিএনপির স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু নেতাকে টাকা দিয়ে পুষতেন।  ফলে পুরো সিংড়ায় বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে করে ফেলেছিলেন বোতলবন্দি। প্রকাশ্যে সুবিধা মতো ওই দলকে ব্যবহার করে নিজের প্রভাব জারি রাখতেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিংড়া বিএনপির সদস্য সচিব দাউদার মাহমুদ পলকের বন্ধু। উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আনোয়ারুল ইসলাম আনু সম্পর্কে তাঁর আপন চাচাশ্বশুর। এ ছাড়া পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আলী আজগর খান গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে পলকের বাসায় ভূরিভোজে অংশ নেন। এ ছাড়া উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি প্রভাষক এন্তাজ আলী সম্পর্কে পলকের আত্মীয়। পৌর জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা আলী আকবর পলকের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে তাঁর পারিবারিক এবং রাজনৈতিক মঞ্চে সশরীরে উপস্থিত থাকতেন। 

এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব দাউদার মাহমুদ বলেন,  ছোট এলাকা। এ কারণে আমরা সবাই একসঙ্গে চলেছি। তবে যার যার রাজনৈতিক মতাদর্শ আলাদা ছিল। এখানে বন্ধুর কাছে থেকে টাকা নিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা দেওয়া-নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।

পৌর জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা আলী আকবর বলেন, সিংড়া এলাকায় ৪৩ বছর ধরে মসজিদের ইমামতি করছি। এ কারণে এলাকার সব ধরনের মানুষের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। কে কোন দল করে সেটি দেখে সম্পর্ক করি না। তবে পলকের সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক ছিল।

এদিকে, সিংড়া আওয়ামী লীগে একক কর্তৃত্ব বজায় রাখতে দলেন ত্যাগী নেতাদের পাত্তাই দিতেন না পলক। এলাকার চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের নিয়ে গড়ে তোলেন বাহিনী। বাতিল হওয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে শ্যালক লুৎফুল হাবিব রুবেলকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী করার জন্যও উঠেপড়ে লাগেন। ঢাকার বাসায় সভা করে অন্য কাউকে নির্বাচনে না দাঁড়ানোর নির্দেশনাও দেন। পরে দেলোয়ার হোসেন পাশা নামে আওয়ামী লীগের একজন মনোনয়ন তুললে তাঁকে অপহরণ করে মারধর করা হয়। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এলে দলীয় চাপে শ্যালকের মনোনয়ন প্রত্যাহার করিয়ে নেন পলক।

সিংড়া যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুল হাসান কামরান বলেন, ক্ষমতার দাপটে পলক ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বঞ্চিত করেছেন। নিজস্ব বলয় তৈরি করে রাজনীতি করেছেন। আত্মীয়করণ করে সব সুযোগ-সুবিধা ভাগাভাগি করেছেন। আমার মতো অনেকেই সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। 

উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি শরিফুল ইসলাম বলেন, দুঃসময়ে ছিলাম, তবে দলের সুসময়ে আমাকে এবং আমার মতো অনেক পরীক্ষিত নেতাকে বাদ দিয়ে অযোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে দল চালিয়েছে। স্থানীয় সব নির্বাচনে পলকের সিন্ডিকেটের মনোনয়ন দেওয়া হতো।

সিংড়া ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি তাজুল ইসলাম রিপন বলেন, স্থানীয় রাজনীতিতে আমার বাপ-চাচার বড় অবদান আছে। তবে পলক এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আমাদের পরিবারকে রাজনীতি থেকে পুরোপুরি বিতাড়িত করা হয়। কাউকে কোনো পদে রাখেননি। পলকের রাজনীতি ছিল জামায়াত-বিএনপি এবং সন্ত্রাসীদের সঙ্গে। 

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শাহজাহান আলীর ছেলে সরফরাজ নেওয়াজ বাবু বলেন, আমার বাবার হাত ধরেই পলকের রাজনীতি শুরু হলেও এমপি হওয়ার পর থেকেই জনপ্রিয় কাউকে কোনো পদে রাখেনি। ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি।

আরও পড়ুন

×