মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধ কেটে রাস্তা-জেটি নির্মাণ

রাস্তা নির্মাণ করতে কাটা হচ্ছে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ সমকাল
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৪ | ২৩:২৮
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ কেটে ব্লক সরিয়ে ট্রাক্টর চলাচলের রাস্তাসহ অস্থায়ী জেটি নির্মাণ করা হয়েছে। মাতাব্বরহাট এলাকায় ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এ কাজ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে মাটি সরে বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যে কোনো সময় ধসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
মেঘনার ভয়াবহ ভাঙন থেকে রামগতি ও কমলনগর উপজেলা রক্ষায় নদীতীর সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় ২০১৪ সালে ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ৪৮ কোটি টাকায় কমলনগর উপজেলার মাতাব্বরহাট এলাকায় ১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের কাজ পায় নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। অর্থ বরাদ্দের দুই বছর পর ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং নামে আরেক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজটি সম্পন্ন করে। প্রকল্পটির আওতায় বর্তমানে নদীর বিভিন্ন অংশে তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে।
মাতাব্বরহাট এলাকায় বাঁধ ঘেঁষেই ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের ব্লক নির্মাণের কারখানা রয়েছে। নদীর অন্যান্য এলাকায় বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে তারা পাঁচটি প্যাকেজের ১৫টি লটে কাজ করছে। সেসব স্থানে ব্লক নিতে নদীপথ ব্যবহারের জন্য বাঁধ কেটে ট্রাক্টর চলাচলের রাস্তা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ব্লক সরিয়ে দুটি অস্থায়ী জেটি স্থাপন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। একটি জেটিতে ভেকু মেশিন রেখে ট্রাক্টরের ওপর থেকে ব্লকগুলো নৌযানে উঠানো হয়। মাটি কাটা ওই দুটি স্থানেই এখন বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। মাটি ও ব্লক সরিয়ে রাস্তা-জেটি নির্মাণের ফলে বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীলদের ম্যানেজ করে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এসব কাজ করছে। তারা কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছে না। প্রতিষ্ঠানটি কয়েক বছর পর চলে যাবে। কিন্তু তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধটি এ উপকূলের জন্য অভিশাপ হয়ে উঠবে।
অভিযোগের বিষয়ে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী মো. বোরহান জানান, প্রকল্পের পাঁচটি প্যাকেজে লুধুয়া ফলকন, পাটারীরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় কাজ চলমান। সেসব স্থানে ট্রাক্টরে ব্লক নেওয়ার জন্য বাঁধ কেটে রাস্তা ও ব্লক সরিয়ে দুটি অস্থায়ী জেটি নির্মাণ করা হয়েছে, কাজ শেষে বাঁধ ঠিক করে দেওয়া হবে। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বাঁধটিতে কয়েকবার ধস নেমেছিল। ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। এতে কোনো ক্ষতি হবে না।
এ সময় রাস্তা বা জেটি নির্মাণের আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে লিখিত কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি বলেও স্বীকার করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত এ কর্মকর্তা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, বেড়িবাঁধ কাটার বিষয়টি আমার জানা নেই। বাঁধের দায়িত্ব পুরোটাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের। তারা আমাদের কিছু জানায়নি। বাঁধের ওপর একটি গাছ রোপণ করতে হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে অনুমতি নিতে হয়। তারা যদি আমাদের বিষয়টি অবহিত করত, অবশ্যই আমরা সহযোগিতা করতাম। বিষয়টি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলব।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের লক্ষ্মীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, বাঁধ কেটে রাস্তা ও জেটি নির্মাণের অনুমতি ঠিকাদারকে দেওয়া হয়নি। খোঁজখবর নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
- বিষয় :
- রাস্তা সংস্কার