খুলনায় সাড়ে ৬ বর্গকিমির জলাধার-গাছপালা কমেছে

খুলনায় অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে কমে গেছে সবুজ গাছপালা ও খাল–জলাধার। এতে পরিবেশ দূষণ বাড়লেও নজর নেই প্রশাসনের। শুক্রবার তোলা সমকাল
মামুন রেজা, খুলনা
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৪ | ২৩:৫২
‘এক সময় নগরীর অধিকাংশ বাড়ির আঙিনায় আম, কাঁঠাল, নারকেলসহ বিভিন্ন ধরনের গাছপালা ছিল। অনেক বাড়িতে পুকুর এবং রাস্তার পাশে জলাশয় ছিল। কিন্তু নগরীতে লোকসংখ্যা বাড়ায় পুকুর
ভরাট করে ও গাছপালা কেটে ঘরবাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। নতুন সড়ক তৈরি ও প্রশস্ত করার কারণেও গাছপালা কাটা এবং জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে। এখন আর নগরীতে আগের মতো গাছপালা ও পুকুর নেই। ১০ তলা কোনো ভবনের ছাদে দাঁড়ালে আগের মতো সবুজ দেখা যায় না– শুধু ভবন আর ভবন।’
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান গতকাল শুক্রবার এভাবেই আক্ষেপ করেন। তিনি ৫৩ বছর ধরে নগরীতে বসবাস করে আসছেন। এখন খুলনা নগরীর আয়তন ৪৫ বর্গকিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ।
তাঁর এই আক্ষেপের প্রমাণ মেলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান অ্যান্ড রুরাল প্ল্যানিং বিভাগের সাম্প্রতিক গবেষণায়। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, অপরিকল্পিত নগরায়ণের প্রভাবে
খুলনা নগরীতে উদ্বেগজনকভাবে কমেছে জলাধার ও গাছপালা। খুলনা নগরীতে ৩০ বছরের ব্যবধানে জলাধার ও গাছপালা কমেছে সাড়ে ৬ বর্গকিলোমিটার এলাকার, যার ব্যাপক প্রভাব পড়ছে নগরীতে।
আরবান অ্যান্ড রুরাল প্ল্যানিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শিল্পী রায় ও সহযোগী অধ্যাপক তানজিল সওগাত নগরায়ণ নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি জানান, তাদের গবেষণায় দেখা যায়, গত ৩০ বছরে নগরীতে জলাধার কমেছে ৪ দশমিক ৬৬ বর্গকিলোমিটার এলাকার। এ ছাড়া গাছপালা কমে গেছে ১ দশমিক ৮৪ বর্গকিলোমিটার এলাকার। নগরীর অধিকাংশ সড়কের পাশে এখন আর আগের মতো গাছপালা নেই।
খুলনা সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালে নগরীতে হোল্ডিং/বাসা ছিল ৩৯ হাজার ৪৩৬টি। ২৪ বছরের ব্যবধানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার ৮১তে।
খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবির উল জব্বার বলেন, ভরাট করা হচ্ছে জলাধার, কাটা হচ্ছে গাছ। উদ্বেগজনকভাবে চলছে এই প্রবণতা। এ ব্যাপারে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, খুলনায় অনেক জলাধার ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এসব জলাশয় তাপ শোষণ করে নিত। আগে অনেক গাছাপালা ছিল, যেগুলো অক্সিজেন সরবরাহ এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করত। এখন গাছপালা কমে যাওয়ায় বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়েছে। জলাধার ও গাছপালা কমে যাওয়ায় ক্রমাগত বাড়ছে তাপমাত্রা এবং তীব্র গরমের স্থায়িত্ব। নগরীতে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এর ফলে গ্রীষ্মকালে বেশির ভাগ নলকূপে পানি ওঠে না।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আমিরুল আজাদ জানান, চলতি বছরের ২ মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা গত ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিদায়ী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নদীর তীর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সড়কের দুই পাশ ও বিভাজকে নতুন করে গাছ লাগাতে হবে।
- বিষয় :
- নগরায়ণ