ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

দ্বন্দ্বের জেরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তালা, চিকিৎসা বন্ধ

দ্বন্দ্বের জেরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তালা, চিকিৎসা বন্ধ

ভুয়াপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তালা দেওয়ায় চিকিৎসা না পেয়ে দাঁড়িয়ে আছেন রোগী সমকাল

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪ | ০০:৩২ | আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৪ | ০০:৩৭

অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘটনা হয়েছে। এতে চিকিৎসাসেবা না পেয়ে রোগী ও স্বজনরা ফিরে গেছেন। গতকাল সোমবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগ ছাড়াও অন্য গেটে তালা লাগিয়ে দেওয়ার এ ঘটনা ঘটে। পরে কর্মস্থলে চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেখা যায়নি।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুই কর্মকর্তার দ্বন্দ্বের জেরে এ অচলাবস্থা বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার খবর পেয়ে দুপুরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাহিমা বিনতে আখতার। কর্মচারীরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সোবহান ও আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. এনামুল হক সোহেলের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন। দাবি আদায়ে সোমবার কর্মবিরতি পালন করেন তারা।
এর আগে বহির্বিভাগে একজন চিকিৎসককে ধাওয়া ও হামলার ঘটনায় অন্য চিকিৎসকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন বলে জানিয়েছেন। এ কারণে তারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেও ফিরে গেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসকের ভাষ্য, বহির্বিভাগে যাওয়ার সময় লোকজন তাদের বাধা দেন এবং হামলার চেষ্টা করেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে দ্রুত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ত্যাগ করেন তারা। কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি তাদের।
রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, সকালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে দেখেন, ফটকে তালা ঝুলছে। ভেতরে কেউ নেই। কর্মচারীরা বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে শত শত মানুষের ভিড়। তবে চিকিৎসক না থাকায় তারা চিকিৎসাসেবা পাননি। চিকিৎসা নিতে আসা জহুরা বেগম বলেন, ‘১০টার সময় হাসপাতালে আইছি। দেহি ডাক্তারগো মধ্যে ঝামেলা চলছে। দুই ঘণ্টা বইসা আছিলাম। পরে বাড়িতে গেছি।’
নুরুজ্জামান নামে এ শিশুর বাবার ভাষ্য, ‘আমার ছোট মেয়েটার পেটে ব্যথার কারণে নিয়ে আসছিলাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। পরে শুনলাম আন্দোলন চলছে। একটি ওষুধের দোকানে মেয়ের চিকিৎসা করাতে হয়েছে।’
এর আগে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের অভিযোগে জেলার সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছেন চিকিৎসক ও কর্মচারীরা। স্টোরকিপার খন্দকার রানা মিয়া বলেন, গত রোববার রাতে দুই ব্যক্তি তাঁর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ অভিযোগের চিঠি নিয়ে আসেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অন্য কর্মচারীরা টিএইচও এবং আরএমও’র অপসারণের দাবিতে বহির্বিভাগসহ অন্য গেটে তালা ঝুলিয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আব্দুস সোবহান এবং আরএমও এনামুল হক সোহেলের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অরাজকতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, দুই কর্মকর্তার অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। তাদের দ্বন্দ্বের কারণে রোগীরা ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না।
আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. এনামুল হক সোহেলের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুস সোবহান বলেন, ‘কয়েকজন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। তালা ঝুলানোর বিষয়টি জানা নেই। তিনজন চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন। যারা আসেননি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জেলার সিভিল সার্জন মিনহাজ উদ্দিন মিয়া বলেন, দুই কর্মকর্তার দ্বন্দ্বের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি জানার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হলেও তারা কেউ কথা শোনেননি। পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। তারা ব্যবস্থা নেবে।

আরও পড়ুন

×