অনুমোদন ছাড়াই যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসা

নান্দাইল উপজেলার চৌরাস্তায় একটি দোকানের সামনে খোলা আকাশের নিচে রাখা গ্যাস সিলিন্ডার সমকাল
নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৪ | ০০:১৭
নান্দাইল উপজেলার সর্বত্র অনুমোদন ছাড়াই বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার। জনবহুল স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ এই জ্বালানি বিক্রি হলেও দু-একজন ছাড়া কারও অনুমোদন নেই। এমন কি অনুমোদনের বিষয়টি অনেকেই জানেনও না। তাই নিয়মকানুন না মেনে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করার কারণে মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। গত ১৫ অক্টোবর নান্দাইল পৌর সদরে এমন একটি দুর্ঘটনায় প্রায় ৪০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থানীদের অভিমত, ফায়ার সার্ভিস তড়িৎ পদক্ষেপ না নিলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়ে যেত।
এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির সরকারি নীতিমালায় রয়েছে– গ্যাস সিলিন্ডার আমদানি, উৎপাদন, মজুত, পরিচালনা, ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটর নিয়োগের মাধ্যমে বিতরণ, বিপণনের জন্য সরকার থেকে পূর্বানুমতি নিতে হবে। পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস বিতরণ বা বিপণন করতে পারবে না। কিন্তু নান্দাইল উপজেলার সর্বত্র কোনো প্রকার পূর্বানুমতি না নিয়েই চলছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সার, কীটনাশক, ডিজেল, পেট্রোল বা ইলেকট্রনিক্সের দোকানেও এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হতে দেখা গেছে। সিলিন্ডার গ্যাস মজুত ও বিক্রির যাবতীয় স্থাপনা আবাসিক বা জনবহুল স্থান পরিহারের নিয়ম থাকলেও বিক্রেতারা এসবের তোয়াক্কা করছেন না; বরং বাজারে, বাসস্ট্যান্ডে কোথাও বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে বিক্রি করছে গ্যাস সিলিন্ডার। এতে যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে আরও বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
আইনে রয়েছে– খুচরা বিক্রির জন্য কোনো দোকানে সর্বোচ্চ ১০টি গ্যাস সিলিন্ডার মজুত রাখা যাবে। তবে সে ক্ষেত্রে বিস্ফোরক অধিদপ্তর এবং ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স থাকতে হবে। অন্যথায় গ্যাস সিলিন্ডার মজুত করতে পারবে না। আইন অমান্যকারীর ১৭ এবং ১৮ ধারা মোতাবেক ৩ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি অর্থদণ্ড এবং দোকানের সমস্ত মালপত্র বাজেয়াপ্ত করার বিধান রয়েছে। কিন্তু অনেক বিক্রেতা লাইসেন্স করার বিষয়টি জানেনই না, আবার কেউ কেউ লাইসেন্স করতে অনেক টাকা এবং হয়রানির শিকার হতে হয় বলে দাবি করেন।
নান্দাইল চৌরাস্তায় গিয়ে দেখা যায়, একটি দোকানের সামনে খোলা জায়গায় বিভিন্ন কোম্পানির অনেক সিলিন্ডার সারি করে রাখা। দোকান মালিক মাহবুব আলম জানান, তাদের গ্যাস বিক্রির ডিলারশিপ রয়েছে। বিস্ফোরক বা ফায়ার সার্ভিসের কোনো অনুমতিপত্র থাকার বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।
বাশহাটী বাজারের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম জানান, তাঁর কোনো ডিলারশিপ নেই। তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে সিলিন্ডার এনে বিক্রি করেন। অন্যান্য লাইসেন্স প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওসব করতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়, তা ছাড়া টাকাও লাগে বেশি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সিলিন্ডার বিক্রি করে কয় টাকা লাভ করি যে এত টাকা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের লাইসেন্স করব।’
গত ১৫ অক্টোবর অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বসুন্ধরা সিলিন্ডার গ্যাস কোম্পানীর ডিলার বাপ্পী ট্রেডার্সের মালিক আনোয়ারুল হক বাপ্পী জানান, এ উপজেলায় তিন-চারজন বৈধ ডিলার রয়েছেন। বাকি যারা ছোটখাটো ব্যবসায়ী, তাদের লাইসেন্স নেই।
ময়মনসিংহ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাজিয়া উদ্দিনের ভাষ্য, তারা সিএনজি স্টেশন ও ফুয়েলিং পাম্প স্থাপনে অনুমতি দিয়ে থাকেন, সিলিন্ডার ব্যবসায় নয়।
ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিদর্শক মো. হামিম বলেন, ‘এখানে নতুন এসেছি। তাই নান্দাইলে কয়জনকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। সংখ্যাটা যে একেবারেই নগণ্য হবে সেটা বলতে পারি।’ তাঁর দাবি, বিস্ফোরক অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া কাউকে লাইসেন্স দেন না তারা।
যত্রতত্র সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রির বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কৃষ্ণ পাল বলেন, ‘আমরা অচিরেই আইনগত পদক্ষেপ নেব।’
- বিষয় :
- সিলিন্ডার বিস্ফোরণ