ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

দুবাই থেকে স্বর্ণবার যাচ্ছে কেরালায়, রুট চট্টগ্রাম

দুবাই থেকে স্বর্ণবার যাচ্ছে কেরালায়, রুট চট্টগ্রাম

প্রতীকী ছবি

 আহমেদ কুতুব, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৪ | ০২:৪৭

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে স্বর্ণবার যাচ্ছে ভারতের কেরালায়। পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। দুবাই বসে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করছেন কেরালার বাসিন্দা বিজন হালদার।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে চালান আসার পর রাখা হয় টয়লেটে। সেখান থেকে নিরাপদে স্বর্ণবার ইমিগ্রেশন পার করেন বিজনের বাংলাদেশি সহযোগী সাতকানিয়ার আহমদ কবির চৌধুরী ও চকরিয়ার এনামুল হক। তাদের বাইরেও চট্টগ্রামে বিজনের হয়ে কাজ করে একাধিক চক্র।

চট্টগ্রামের একটি স্বর্ণবার চোরাচালান মামলায় সিআইডির তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত ২৩ অক্টোবর চট্টগ্রাম আদালতে চার্জশিট দাখিল করে সংস্থাটি।

২০২০ সালের ১ অক্টোবর দুবাই থেকে বিজি০১৪৮ ফ্লাইটে শাহ আমানত বিমানবন্দরে ৮২ স্বর্ণবার ও ২১ ধরনের অলংকার নিয়ে গ্রেপ্তার হন এনামুল হক। এ ঘটনায় কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আবীর নাথ পতেঙ্গা থানায় মামলা করেন। পালানোর সময় চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনে ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর গ্রেপ্তার হন আহমদ কবির চৌধুরী।

সিআইডি চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক মাইন উদ্দিন বলেন, এনামুলকে জিজ্ঞাসাবাদের পর আহমদের খোঁজ মেলে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে ভারতের কেরালার বাসিন্দা বিজন হালদারের নাম উঠে আসে। তারা দুবাই থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কেরালায় স্বর্ণবার চোরাচালান করে আসছেন। বিজন ভারতের নাগরিক হওয়ায় তাঁর পরিচয় শনাক্ত ও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। এনামুল ও আহমদকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছি।

অভিযোগের বিষয়ে আহমদ কবির চৌধুরী বলেন, বৈধভাবে মাঝেমধ্যে আমি কিছু অলংকার আনতাম। চোরাচালানে জড়িত নই। এ মামলায় আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে।

বিজনের চক্রে যেভাবে আহমদ

সিআইডির তদন্ত এবং আহমদ কবির চৌধুরীর আদালতের জবানবন্দিতে উঠে আসে, ১৫ বছর ধরে দুবাইপ্রবাসী আহমদ কবিরের সঙ্গে ২০১৯ সালে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিজনের পরিচয় হয়। বিজনের কাছ থেকে স্বর্ণবার ও গহনা কিনে ট্যাক্স দিয়ে প্রথমে চট্টগ্রামে আনতেন আহমদ। বছরে ১০০ গ্রামের নিচে বৈধভাবেই আনতেন। দুবাইয়ে আহমদের বোরকার দোকানের পাশে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন এনামুল। সেই পরিচয়ের সূত্রে এনামকে চক্রে জড়িয়ে ফেলেন বিজন ও আহমদ।

২০২০ সালে বিজন ৮০টি স্বর্ণবার দিয়ে এনামকে বাংলাদেশে পাঠান। সঙ্গে কবিরের দুটি স্বর্ণবার ও কিছু জুয়েলারি ছিল। কথা ছিল, এনাম এগুলো বিমানবন্দর পার করে বিজন কিংবা কবিরকে জানাবেন। এর পর ৮০ পিস স্বর্ণবার বিজনের বলে দেওয়া ব্যক্তিকে দেবে।

তৃতীয় চালানে ধরা পড়েন এনাম

সিআইডির তদন্ত ও এনামের জবানবন্দিতে জানানো হয়, পরিচয় সূত্রে ২০২০ সাল থেকে দুবাইয়ে বিজন ও আহমদের কাছ থেকে চট্টগ্রামে স্বর্ণবার এবং অলংকার আনতেন এনাম। সর্বশেষ ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৮২টি স্বর্ণবারের প্যাকেট নিয়ে আসেন চট্টগ্রামে। আহমদ সরাসরি বিজনের হয়ে কাজ করতেন। তিনি নিজের গাড়িতে করে দুবাই এয়ারপোর্টে এনে বিমানে তুলে দেন। চালানটি নিয়ে আসার আগে প্রথমবার ২২ ও দ্বিতীয়বার ৩৩টি স্বর্ণবার নিরাপদে বিজনের লোকের হাতে শাহ আমানত বিমানবন্দরে পৌঁছে দেন এনাম। 

দুবাই থেকে বিজনের প্রতিটি স্বর্ণবারের চালান চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পৌঁছে দিলে আসা-যাওয়ার টিকিটসহ ২৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা করে পেতেন এনাম। আর আহমদ পেতেন ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। বিমানবন্দরের বাইরে থাকা বিজনের লোকদের হাতে পৌঁছালেই মিলত টাকা। বিজন যে ফোন নম্বর পাঠাতেন, সেই ব্যক্তির হাতেই তুলে দেওয়া হতো স্বর্ণবার।

আরও পড়ুন

×