জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সরকারি কর্মচারীর রেস্টুরেন্ট

হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অফিস সহায়ক নয়ন চন্দ্র সরকারের রেস্টুরেন্ট সমকাল
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৪ | ২৩:৫১
হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভবন দখল করে কালেক্টরেট ক্যান্টিন ও রেস্টুরেন্ট নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহায়ক নয়ন চন্দ্র সরকার। দীর্ঘদিন ধরে তিনি সরকারি অফিসের বিদ্যুৎ, পানি ও একটি ভবন দখল করে চালিয়ে আসছেন রমরমা ব্যবসা। অনুদান দিচ্ছেন ডিসি ফান্ড ও কালেক্টরেট ক্লাবে। এতে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি নিয়ম-বহির্ভূতভাবে নয়নকে ইজারা দেওয়া হয়। জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় দরপত্র আহ্বান ছাড়াই ইজারা নিয়ে রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করছেন তিনি। এ নিয়ে কার্যালয়ের অন্যান্য কর্মচারী ও সচেতন নাগরিক মহলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত নয়ন। প্রায় দুই বছর আগে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহানের কাছ থেকে আকুতি-মিনতি করে দরপত্র ছাড়াই ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির ইজারা নেন তিনি। এরপর থেকে তিনি রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করতে গিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের একটি ভবন, বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহার করে আসছেন। এছাড়া রেস্টুরেন্টের কর্মচারীরা ওই ভবনে রাত্রিযাপন করছেন। এতে করে জেলা প্রশাসক কার্যালয় ভবন এলাকায় বাইরের লোকজনের আনাগোনা বাড়ছে। এছাড়া রেস্টুরেন্টের ময়লা যত্রতত্র ফেলার কারণে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
তবে রেস্টুরেন্টের ইজারা কর্তৃপক্ষ নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে রেস্টুরেন্টটি ইজারা দেওয়ার কথা নিশ্চিত করলেও ভিন্ন কথা বলছেন কালেক্টরেট ক্লাবের সদস্যরা। রেস্টুরেন্টটি সরকারি নয়, কালেক্টরেট ক্লাবের বলে দাবি কর্মচারীদের। এতে ক্লাবের ফান্ডে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা জমা দেওয়া হয় বলেও জানান ক্লাবের এক সদস্য। অপর একটি সূত্র জানায়, সরকারি ভবন ভাড়া বা ইজারা দিলে রাজস্ব ব্যয় হবে সরকারি খাতে। রেস্টুরেন্টের ইজারার টাকা কীভাবে কালেক্টরেট ক্লাবে ব্যয় করা হয় এটা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালেক্টরেট ক্লাবের এক সদস্য অভিযোগ করে বলেন, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে দরপত্র ঘোষণা ছাড়াই তাঁকে রেস্টুরেন্টটি ইজারা দেওয়া হয়েছে। যে কারণে অন্য কর্মচারীরা ইজারায় অংশ নিতে পারেননি। আওয়ামী লীগ নেতাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে নয়ন এককভাবে রেস্টুরেন্টটি ইজারা নেন। বর্তমানে তিনি প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা জমা দিচ্ছেন। এর মধ্যে ৫ হাজার টাকা ডিসি ফান্ড ও ৫ হাজার টাকা কালেক্টরেট ক্লাবে জমা হয়। তিনি বলেন, সরকারি ভবনের ভাড়া ব্যক্তিগত ক্লাব বা কোনো সংগঠনের ফান্ডে জমা দেওয়া সম্পূর্ণ অবৈধ। সরকারি ভবনের বিদ্যুৎ, পানি দীর্ঘদিন ধরে রেস্টুরেন্টে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা ঠিক নয়।
অভিযোগ প্রসঙ্গে রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী নয়ন চন্দ্র সরকার বলেন, তিনি সরকারিভাবে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছ থেকে রেস্টুরেন্টটি ইজারা নিয়েছেন। কত টাকায় ইজারা নিয়েছেন এবং রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করতে সরকারি অফিসের পানি, বিদ্যুৎ ও ভবন ব্যবহারে বিষয়টি চুক্তিনামায় আছে কি-না জানতে চাইলে এ বিষয়ে তিনি কথা বলতে চাননি।
কালেক্টরেট ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নূর হোসেন বলেন, তাঁর জানামতে নয়ন সাবেক জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে রেস্টুরেন্টটি ইজারা নিয়েছে। এরপর থেকে তিনি প্রতি মাসে কালেক্টরেট ক্লাবের ফান্ডে ১০ হাজার টাকা জমা দিচ্ছে।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. বায়েজিদ সর্দার বলেন, তাঁর জানামতে নয়ন চন্দ্রকে ওই রেস্টুরেন্ট পরিচালনার ইজারা দেওয়া হয়েছে। তবে সরকারি পানি, বিদ্যুৎ ও ভবন ব্যবহারের বিষয়ে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। তিনি এখানে নতুন যোগদান করেছেন। বিষয়টি বুঝতে একটু সময় লাগবে।
- বিষয় :
- রেস্টুরেন্ট