ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

‘গলা টিপে’ মারা হচ্ছে আরেক শতবর্ষী পুকুর

‘গলা টিপে’ মারা হচ্ছে আরেক শতবর্ষী পুকুর

বরিশাল নগরীর ব্রাঞ্চ রোডে বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে কেরানি বাড়ির পুকুর। শুক্রবারের ছবি সমকাল

 বরিশাল ব্যুরো 

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:০২

বরিশালে খড়্গ নেমে এসেছে আরেকটি পুরোনো পুকুরের ওপর। নগরীর কাউনিয়া ব্রাঞ্চ রোড পুলিশ সেকশন এলাকায় শতবর্ষী এ জলাশয় ভরাট করতে শুরু করেছে মালিকপক্ষ। বৃহস্পতিবার রাতের আঁধারে ফেলা হচ্ছে ট্রাকের পর ট্রাক বালু। এতে ছোট হয়ে আসছে পুকুরটির ‘শ্বাসনালি’, সংকুচিত হচ্ছে পানি ধারণক্ষমতা। তবে কাজ শুরু করার আগে নেওয়া হয়নি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র কিংবা সিটি করপোরেশনের অনুমতি। খবর পেয়ে সরোবরটি বাঁচাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নগরীর ব্রাঞ্চ রোড পুলিশ সেকশন মোড় থেকে সাবান ফ্যাক্টরিমুখী সড়কটিতে প্রবেশমুখে পশ্চিম পাশে পুকুরটির অবস্থান। এলাকাটি সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে। স্থানীয়রা জানান, এটি কেরানী বাড়ি পুকুর নামে পরিচিত। কেরানী বাড়ির উত্তরসূরিরা জলাশয়টি ভরাট করছেন। শুক্র ও শনিবার সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোতে সাপ্তাহিক ছুটি থাকার সুযোগ নিতে বৃহস্পতিবার রাতে ভরাট কার্যক্রম শুরু করা হয়। এর আগে পাম্প দিয়ে পানি অপসারণ করা হয়। তবে সিটি করপোরেশন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন অনুযায়ী উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে পূর্ব অনুমতি ছাড়া পুকুর-জলাশয় ভরাট নিষিদ্ধ ও আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। 

স্থানীয়রা আরও জানান, কেরানী বাড়িটি বহু পুরোনো। প্রায় আড়াই একর আয়তনের বাড়িটির মূল মালিক প্রয়াত আবদুল আলী মোল্লা। তিনি গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে বাড়িটির বাসিন্দা হন। উত্তরাধিকার সূত্রে এখন তাঁর চার ছেলে ও তিন মেয়ে এ সম্পত্তি ভোগ করছেন। সড়কের পাশে পুকুরটির আয়তন হবে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ। 
স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যমতে, বর্তমানে এ বাড়িতে আবদুল আলীর ছেলে আতিকুর রহমান মানিক থাকেন। তাদের এক ভাই মারা গেছেন, অন্য দু’জন থাকেন রাজধানীতে। বাড়িটি ভাইদের মধ্যে ভাগবণ্টন হয়েছে। বোনদের অংশ বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে। এ কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করছেন মানিক।  
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মানিকের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি মোবাইল ফোনও রিসিভ করছেন না।
সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ শাখার প্রধান স্বপন কুমার জানান, শুক্রবার দুপুরে খবর পেয়ে তিনিসহ করপোরেশনের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। মালিকপক্ষ দাবি করেছে, পুকুরটির আয়তন ১৫ শতাংশর। তাদের এ দাবি মিথ্যা। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে তারা নিশ্চিত হয়েছে যে পুকুরটি ৪০ শতাংশের। 
সিটি করপোরেশনের সড়ক পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, পুকুরে ফের বালু না ফেলার জন্য মালিকপক্ষকে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। পুকুর ভরাটে নিষেধাজ্ঞার সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। 

পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী সাইফুদ্দিন জানান, পুকুর ভরাটের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে তাঁর দপ্তরের পরিদর্শক পাঠিয়েছেন। ভরাট করে থাকলে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনানুযায়ী দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। 
এর আগে চলতি বছরের শুরুর দিকে নগরীর গোরস্থান সড়কে একটি অর্ধশতবর্ষী পুকুর ভরাটের চেষ্টা করা হয়েছিল। এ বিষয়ে সমকালে সংবাদ প্রকাশের পরদিন সিটি করপোরেশন তা বন্ধ করে দেয়। জলাশয়টি এখনও অক্ষত আছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নগরীর বিভিন্ন স্থানে পুকুর ভরাটের হিড়িক পড়ে। এর মধ্যে কয়েকটি বাঁচাতে পেরেছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

আরও পড়ুন

×