ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

আয়কর সনদ দেখাতে না পারায় দোকানিকে ‘পেটালেন’ এসিল্যান্ড

আয়কর সনদ দেখাতে না পারায় দোকানিকে ‘পেটালেন’ এসিল্যান্ড

ভুক্তভোগী সোলাইমান ফরাজী। ছবি: সমকাল

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৪ | ১৮:০৮ | আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৪ | ২১:৩২

গ্রাম্য বাজারে ছোট্ট দোকান আছে সোলাইমান ফরাজীর। টিনের একটি ঘরের মধ্যে কাপড়ের ব্যবসা করে সংসারের চাকা সচল রেখেছেন এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। সেখান থেকে যা আয় হয়, তা দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে সচ্ছলভাবে চলাই তাঁর জন্য কষ্টকর। এর মধ্যে দোকানটিতে অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন। অভিযানে তাঁর কাছে টিন সার্টিফিকেট বা আয়কর সনদ চাওয়া হয়। তা দেখাতে না পারায় নির্মমতার শিকার হয়েছেন সোলাইমান। তাঁকে শরীয়তপুরের ডামুড্যার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বকর সিদ্দিকের কার্যালয়ে নিয়ে পেটানো হয়। খবর পেয়ে এগিয়ে যান স্থানীয় জামায়াত নেতারা। তারা দুই হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে আনেন।

উপজেলা প্রশাসনের নির্যাতনের শিকার হয়ে আজ সোমবার অভিযুক্ত এসিল্যান্ড আবু বকরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী সোলাইমান। তিনি জেলা প্রাশাসকের কাছে বিষয়টি জানালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আইন হাতে তুলে নেওয়ার খবরটি চাউর হয়। অভিযোগটি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠনের আশ্বাস দিয়েছেন নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন।

উপজেলার ধানকাঠির মডেরহাট বাজারের দোকানি সোলাইমান বলেন, গত বৃহস্পতিবার বাজারে অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। এতে নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বকর সিদ্দিক। তিনি সোলাইমানের কাছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স চাইলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখানো হয়। এর পর তিনি আয়কর সনদ চাইলে অনেকটা আকাশ থেকে পড়েন দোকানি। বিষয়টি সম্পর্কে তিনি খুব একটা জানেনও না। কাগজ দেখাতে না পারায় ১ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে ক্ষুদ্র দোকানি কীভাবে এত টাকা জরিমানা দেবেন– তা নিয়ে কাকুতিমিনতি করতে থাকলে ক্ষিপ্ত হন এসিল্যান্ড আবু বকর। এক পর্যায়ে তিনি সঙ্গে থাকা আনসার সদস্যকে দিয়ে সোলাইমানকে গাড়িতে উঠিয়ে নিজ কার্যালয়ে নেন।

তিনি আরও বলেন, কার্যালয়ে আটকে রেখে প্রথমে তাঁকে কান ধরে উঠবস এবং পরে আনসার ও তিনি নিজে লাঠি দিয়ে পেটান। খবর পেয়ে ওই কার্যালয়ে হাজির হন উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা সাইফুল ইসলাম ও পৌর শাখার আমির আতিকুর রহমান কবির। তাদের সামনেও নির্যাতন চলে। জামায়াত নেতারা সোলাইমানকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানালে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় ২ হাজার টাকা দিয়ে দোকানিকে মুক্ত করেন তারা।

মডেরহাট বাজার বণিক সমিতির সভাপতি সরোয়ার মাদবর বলেন, ‘দোকানদারের কাছে ব্যবসা পরিচালনার প্রয়োজনীয় কাগজ না থাকলেও তাঁকে ধরে নিয়ে পেটাতে পারেন না, জরিমানা করবেন, না হয় দোকান সিলগালা করে দেবেন। আমার জানামতে, বাজারের কারোরই আয়কর সনদ নেই। যদি এটা লাগে, তাহলে আমাদের আগেই নোটিশ দিয়ে জানাতে হবে।’

জামায়াত নেতা সাইফুল বলেন, ‘আমাদের সামনেই সোলাইমানকে অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ লাঠিপেটা করেন আনসার সদস্য ও এসিল্যান্ড। কেউ ভুল করলে তাঁকে আইনগতভাবে জরিমানা বা কারাদণ্ড দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু একজন কর্মকর্তা এভাবে আইন হাতে তুলে নিতে পারেন না। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্ত এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে আর কোনো কর্মকর্তা এ ধরনের কাণ্ড করতে না পারেন।’ 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এসিল্যান্ড আবু বকর বলেন, ‘ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একটি বিলিং লাইসেন্স আনতে হয়। কিন্তু ওই ব্যবসায়ী লাইসেন্সটি ছাড়াই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছিলেন। তাঁকে আইনগতভাবে কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে তিন জামায়াত নেতার অনুরোধে তাঁকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দিয়েছি। কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেনি।’

জেলা প্রশাসক আশরাফ বলেন, ঘটনাটি দ্রুত তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

আরও পড়ুন

×