ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

মামলায় ফেঁসে জেল খাটছেন ভ্যানচালক

জেনারেটরের তারে জড়িয়ে হাতির মৃত্যু

মামলায় ফেঁসে জেল  খাটছেন ভ্যানচালক

ফাইল ছবি

মিজানুর রহমান, নালিতাবাড়ী (শেরপুর)

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:০২

নালিতাবাড়ী সীমান্তের বাতকুচি এলাকায় বসবাস করতেন শহিদুল ইসলাম। সংসারে স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। জায়গা-জমি বলতে ১০ শতাংশের বসতভিটা ছাড়া কিছুই নেই তাঁর। নিজে ভ্যান চালিয়ে ও একমাত্র ছেলে অটোরিকশা চালিয়ে সংসার খরচ বহন করেন। নিজের জমিজমা না থাকলেও অন্যের ধানক্ষেতের পাশে জেনারেটরের তারে জড়িয়ে হাতির মৃত্যুর ঘটনায় ফেঁসে গেছেন তিনি। বনবিভাগের মামলায় জেল খাটছেন। গত ২ অক্টোবর শহিদুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
জানা গেছে, বাতকুচি এলাকার সোহরাব আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম। সোহরাব আলী পাহাড়ি এলাকা বুরুঙ্গা গ্রামে বসবাস করতেন। বন্যহাতির উৎপাতে টিকতে না পেরে পাশের বাতকুচি এলাকায় ৫০ হাজার টাকায় এক টুকরা জমি কিনে বাড়ি করেন। কিন্তু সেখানেও হাতির আনাগোনা বেড়ে যায়। প্রায় ১৬ বছর আগে একদিন বন্যহাতির আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে হাতির হামলায় মারা যান সোহরাব আলী। এ অবস্থায় সংসারের হাল ধরেন শহিদুল। সম্প্রতি বিভিন্ন এনজিও থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ করে ছেলের জন্য একটি অটোরিকশা ও নিজের জন্য একটি ভ্যান কেনেন। এতে প্রতি মাসে ঋণের কিস্তি পরিশোধ ও সংসার খরচ চলে যেত। এখন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি জেলে থাকায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা।
হাতি মৃত্যুর মামলায় জেলে যাওয়া স্বামীকে কীভাবে মুক্ত করবেন, কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না স্ত্রী জামেলা খাতুন।
এলাকাবাসী জানান, ধান পাকার মৌসুম এলেই সীমান্তজুড়ে হাতির তাণ্ডব শুরু হয়। এক সপ্তাহ ধরে কয়েকটি বন্যহাতির পাল শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্ত এলাকা চষে বেড়াচ্ছে। অনেক চাষি ফসল বাঁচাতে ক্ষেতের পাশে বৈদ্যুতিক জিআই তার দিয়ে ঘিরে আলো ছড়িয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে ৩০টির বেশি হাতি বাতকুচি টিলাপাড়ায় হানা দেয়। এ সময় ফসল রক্ষায় ক্ষেতের পাশে দেওয়া বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে একটি বন্যহাতি মারা যায়।
খবর পেয়ে মৃত হাতি দেখতে উৎসুক এলাকাবাসীর সঙ্গে শহিদুল ইসলামও নিজের ভ্যান চালিয়ে ঘটনাস্থলে যান। পরে কয়েকজন কৃষক ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত জেনারেটর সরাতে তাঁর ভ্যানে চেপে দেন। হাতি মৃত্যুর খবরে সেখানে বন বিভাগের লোকজনও চলে আসে। এ সময় জেনারেটর ও জিআই তারসহ শহিদুল ইসলামকে আটক করে বন বিভাগ। পরে হাতি মৃত্যুর ঘটনায় থানায় ১১ জনের নামে মামলা করেন মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। এই মামলায় শহিদুল ইসলামসহ দু’জনকে কারাগারে বন্দি করেন।
স্থানীয় বিএনপি নেতা উমর ফারুক ও ইউপি সদস্য আনসার আলীর ভাষ্য, ফসলের নিরাপত্তার জন্য জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর চাঁদার টাকায় জেনারেটরটি কেনা হয়। যাতে জেনারেটরের আলো ছড়িয়ে হাতিগুলো বনে ফেরানো যায়। দুর্ঘটনাক্রমে জেনারেটরের তারে জড়িয়ে হাতি মারা যাওয়ার সঙ্গে শহিদুল জড়িত নন। তার ভ্যানে জেনারেটর বহন করার কারণে তাকে আসামি করা হয়েছে। শহিদুলের মুক্তির দাবি জানান তিনি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। তাকে হাতেনাতে ধরেই মামলা দেওয়া হয়েছে।’
সহকারী বন সংরক্ষক সাদেকুল ইসলাম খান বলেন, ‘শহিদুল ইসলাম ওই জেনারেটরের ড্রাইভার ছিল। সেজন্য তাকে আসামি করা হয়েছে।’
 

আরও পড়ুন

×