ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

দেড় বছর ধরে নেই জলাতঙ্কের টিকা

দেড় বছর ধরে নেই জলাতঙ্কের টিকা

ফাইল ছবি

সোহেল মিয়া, বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী)

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৪ | ২২:২৮

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় দেড় বছর ধরে জলাতঙ্কের টিকার সরবরাহ নেই। ফলে কুকুর-বিড়ালের কামড়ে আক্রান্ত রোগীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। হাসপাতালে এসে টিকা না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের।
জানা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকা না থাকায় যারা সামর্থ্যবান তারা বাইরে থেকে টিকা কিনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যাদের সামর্থ্য নেই তারা রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে যাচ্ছেন। কিন্তু গত এক মাস ধরে সদর হাসপাতালেও জলাতঙ্কের টিকা না থাকায় রোগীদের হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে।

বেশি দামের কারণে দরিদ্র রোগীরা টিকা না নিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। হাসপাতালে টিকা না পেয়ে অনেকেই আশ্রয় নিচ্ছেন কবিরাজের কাছে। 
গত ৮ সেপ্টেম্বর বহরপুর ইউনিয়নের গোহাইলবাড়ী গ্রামের হেলাল মণ্ডলের মেয়ে রাফিয়া আক্তারকে (৫) কুকুর কামড়ালে তাকে নিয়ে সদর হাসপাতালে যান বাবা। সেখানে টিকা না পেয়ে বাড়ির পাশের আব্বাস কবিরাজের কাছে মেয়ের চিকিৎসা করান। ২৩ অক্টোবর রাতে শিশু রাফিয়ার অবস্থার অবনতি হলে তাকে দ্রুত বালিয়াকান্দি হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাফিয়ার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন। ওই রাতেই ১২টার দিকে রাফিয়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। 
কান্নাজড়িত কণ্ঠে রাফিয়ার মা আন্না খাতুন জানান, রাফিয়াকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে তাদের জানানো হয় টিকা নেই। এরপর তারা বাড়িতে চলে এসে স্থানীয় কবিরাজের শরণাপন্ন হন। কবিরাজ তাদের বলেন, কবিরাজের ওষুধ খেলে কোনো টিকা নেওয়া যাবে না। তাই তারা কোনো টিকা বাজার থেকে কেনেননি। কবিরাজের চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাফিয়াকে বাঁচানো গেল না।
রাফিয়ার বড় বোন বালিয়াকান্দি সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আইরিন আক্তার রিতু আবেগপ্রবণ হয়ে বলে, তারা জানে বালিয়াকান্দি হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে জলাতঙ্কের টিকা নেই। তাই রাফিয়াকে কুকুরে কামড় দেওয়ার পরই তারা দ্রুত সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেও টিকা ছিল না। হাসপাতালে টিকা থাকলে তারা কবিরাজের শরণাপন্ন হতো না।
কবিরাজ আব্বাস জানান, তিনি প্রায় ২৫ বছর ধরে কবিরাজি করছেন। তাঁর ওস্তাদের স্বপ্নে পাওয়া একটি গাছের মাধ্যমে তিনি কুকুর-বিড়ালের কামড়ের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। 
ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা যায়, বালিয়াকান্দি উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে গড়ে প্রতি মাসে ২০০ জলাতঙ্কের টিকার চাহিদা রয়েছে। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে এ চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০০ থেকে ৩৫০।

বাজারে একমাত্র ইনসেপ্টা কোম্পানি র‍্যাবিক্স-ভিসি নামের এ টিকা সরবরাহ করে। প্রতিটি টিকার দাম ৫০০ টাকা। একজন রোগীর পুরো ডোজ সম্পূর্ণ করতে ৫টি টিকার দাম পড়ে ২৫০০ টাকা। 
বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের প্রথম দিকে সরকার সামান্য কিছু জলাতঙ্কের টিকা হাসপাতালে বিনামূল্যে সরবরাহ করে। সেই টিকা দিয়ে তারা মাত্র ৫০ জন রোগীকে সেবা দিতে পেরেছিল। জুলাই মাসে তাদের টিকা শেষ হয়ে যায়। এরপর প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তারা জলাতঙ্কের টিকা পায়নি। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা জানান, কুকুর ও বিড়ালের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে বালিয়াকান্দি হাসপাতালে প্রতি মাসে গড়ে ২০ থেকে ২৫ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। টিকা সরবরাহ না থাকায় তারা রোগীদের চিকিৎসাসেবা না দিয়েই ফিরিয়ে দেন। রোগীদের জেলা সদর হাসপাতাল থেকে টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেন তারা।
বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, প্রায় দেড় বছর ধরে তাদের জলাতঙ্কের টিকার সরবরাহ নেই। কোনো রোগী এলে তারা সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। তারা একটি চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। টিকা হাতে পেলেই তারা সেবা দেওয়া শুরু করবেন। 
সদর হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সেখানেও প্রায় এক মাস টিকা সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালে র‍্যাবিস টিকাদান কেন্দ্র ২০৩ নম্বর কক্ষের সামনে একটি নোটিশ টানিয়ে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। তাতে লেখা–‘গত ১৩ অক্টোবর থেকে বিড়াল, কুকুরের টিকা সরবরাহ নেই।’ 

গতকাল শনিবার কথা হয় রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ইব্রাহিম টিটনের সঙ্গে। তিনি সমকালকে জানিয়েছেন, জলাতঙ্কের টিকা তারা হাতে পেয়েছেন। তাদের সংগ্রহে এখন পর্যাপ্ত টিকা রয়েছে। আজ রোববার থেকে জেলার সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিনামূল্যে জলাতঙ্কের টিকা পাওয়া যাবে। 
 

আরও পড়ুন

×