তিন মামলায় আব্দুর রাজ্জাক ১৫ দিনের রিমান্ডে

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাককে তিন মামলায় পাঁচ দিন করে মোট ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এর আগে টাঙ্গাইলে দুটি হত্যাসহ তিন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। 

সোমবার বিকেলে সাড়ে ৩টার দিকে আব্দুর রাজ্জাককে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে টাঙ্গাইল জেলা কারাগার থেকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনা হয়। এ সময় তার বিচারের দাবিতে বিএনপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী, গণঅধিকার পরিষদ ও জামায়াতে ইসলামির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিক্ষোভকারীরা আব্দুর রাজ্জাকের দিকে ডিম ছুড়ে মারে।

আদালত সূত্র জানায়, আব্দুর রাজ্জাককে প্রথমে মধুপুর আমলী আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে তাকে গত ৪ আগস্ট মধুপুর উপজেলা সদরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ওই আদালতের বিচারক অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল মোহসীন তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট মধুপুর উপজেলায় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করা হয়। এতে কয়েকজন আহত হয়। এ ঘটনায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর জাহিদ হাসান বাদী হয়ে মধুপুর আমলী আদালতে মামলা করেন। মামলায় আব্দুর রাজ্জাককে প্রধান আসামি করা হয়। আদালত মামলাটি গ্রহণের জন্য মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন।

গত ৫ আগস্ট রাতে টাঙ্গাইল শহরের মেইন রোডে ছাত্র জনতার বিজয় মিছিল বের করে। ওই মিছিলে হামলা ও গুলি করা হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে স্কুলছাত্র মারুফ মিয়া নিহত হন। এ ঘটনায় নিহতের মা মোর্শেদা বাদী হয়ে গত ১৮ আগস্ট টাঙ্গাইল সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে আব্দুর রাজ্জাককে প্রধান আসামি করা হয়। ওই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ওই আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পশুপতি বিশ্বাস পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

পরে আব্দুর রাজ্জাককে মির্জাপুর আমলী আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে পুলিশ মির্জাপুরে গুলিতে নিহত কলেজছাত্র ইমন হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো এবং ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে মির্জাপুরের গোড়াই এলাকায় ছাত্র জনতার মিছিলে গুলি করা হয়। এতে কলেজছাত্র ইমন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ আগস্ট ইমন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। এ ঘটনায় ইমনের ভাই সুমন বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় গত ১৯ আগস্ট হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে আব্দুর রাজ্জাককে প্রধান আসামি করা হয়। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে বিচারক ইসমত আরা সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাককে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আব্দুর রাজ্জাকের পক্ষে টাঙ্গাইল জেলা অ্যাডভোকেট বারের সভাপতি একেএম শামীমুল আক্তারসহ প্রায় ২৫ জন আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেন। তারা আব্দুর রাজ্জাকের জামিন প্রার্থনা করেন। এদিকে, টাঙ্গাইলের নবনিযুক্ত সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) শফিকুল ইসলাম রিপনের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাকের জামিনের বিরোধিতা করেন।

অপরদিকে, সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাককে আদালতে হাজির করা হবে এ খবর শোনার পর সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিএনপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা, জামায়াত ইসলামী ও গণঅধিকার পরিষদের কর্মীরা আদালত এলাকায় অবস্থান নেয়। তারা আদালতে প্রবেশের বিভিন্ন পথে অবস্থান করতে থাকে। বিভিন্ন সময় মিছিলও বের করে। বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে আব্দুর রাজ্জাককে বহনকারী প্রিজন ভ্যান আদালত এলাকায় প্রবেশ করে। বিক্ষোভকারীরা এ সময় ওই ভ্যান ঘিরে আব্দুর রাজ্জাকের বিচারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। তারা আব্দুর রাজ্জাকের দিকে ডিম ছুড়ে মারে। তাকে আদালত থেকে নিয়ে যাওয়ার সময়ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়।

সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) শফিকুল ইসলাম রিপন বলেন, আজকে মোট তিনটি মামলায় তার রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গত ৪ আগস্ট মধুপুর উপজেলায় হামলার ঘটনায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা ও অপর দুটি হলো মির্জাপুরে ইমন হত্যা ও টাঙ্গাইল সদরে মারুফ হত্যা মামলা। 

টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানবীর আহম্মেদ বলেন, প্রথমে টাঙ্গাইল সদর থানার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আব্দুর রাজ্জাককে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হবে। আমরা তাকে ইতোমধ্যে সদর থানায় নিয়ে এসেছি। আমাদের রিমান্ড শেষ হলে আদালতের মাধ্যমে অপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা রিমান্ডের জন্য নেবেন।