দরকষাকষি করে শ্রম বিক্রি, মজুরি বৈষম্যের শিকার নারী

নাটোরের গুরুদাসপুরের নয়াবাজার শ্রমিক হাটে শ্রম বিক্রেতা ও ক্রেতার ভিড় সমকাল
নাজমুল হাসান, গুরুদাসপুর (নাটোর)
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:১৭ | আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:৫৮
ভোরে আলো কেবল ফুটতে শুরু করেছে। কিছু মানুষ তখনও ঘুমে আচ্ছন্ন। তবে পেটের দায়ে সাত সকালেই হাজারো মানুষ জড়ো হয়েছেন। কারও পরনে ছেঁড়াফাটা লুঙ্গি, কেউ পরেছেন পুরোনো প্যান্ট। কোমরে গামছা বাঁধা।
এ চিত্র দেখা যায় গুরুদাসপুরের বনপাড়া হাটিকুমরুল মহাসড়কের নয়াবাজার হাটে।
প্রতিদিন পাঁচ থেকে ৭ হাজার শ্রমিক এ হাটে আসেন শ্রম বিক্রি করতে। আরেক দল আসেন শ্রম কিনতে। দরদাম মিটিয়ে উভয়পক্ষ রওনা দেন গন্তব্যের দিকে।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, সলঙ্গা, মান্নাননগর, উল্লাপাড়াসহ বিভিন্ন স্থান থেকে নয়াবাজার হাটে আসেন শ্রমিকরা। ভোরে সড়ক-মহাসড়কে বাস তেমন থাকে না। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ট্রাক, সিএনজি, লেগুনায় হাটে আসেন তারা।
তাড়াশের শ্রমিক আব্দুল জব্বার জানান, ভোর ৫টায় বাড়ি থেকে বের হন। বাস পেলে ২০ টাকায় নয়াবাজারে চলে আসেন। না পেলে সিএনজিতে ৫০ টাকা খরচ করে আসতে হয়। শ্রম বিক্রি করেন ৫৫০ টাকায়। যাতায়াত ভাড়া ১০০ টাকা বাদ দিলে থাকে ৪৫০ টাকা।
উল্লাপাড়া থেকে আসা কামরুল ইসলাম বলেন, এলাকায় কাজ নেই। তাই প্রতিদিনই এখানে আসেন। অনেক সময় কাজের চাহিদা থাকে না। তখন গৃহস্থরা কম টাকা দেয়। তখন কাজ না করেই ফিরে যেতে হয়।’
বনপাড়া হাটিকুমড়ুল মহাসড়কের দুই পাশের মাঠে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ফসলের ক্ষেত।
সেখানে রসুন রোপন ও ধান কাটা শুরু হয়েছে। ক্ষেতের কাজের জন্য ভোরের আলো ফোটার আগেই হাজারো মানুষ জড়ো হয়েছেন গুরুদাসপুরের ধারাবারিষা ইউনিয়নের নয়াবাজারের শ্রমিকের হাটে।
বুধবার ভোর ৫টায় হাটে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট ট্রাক, লেগুনা, সিএনজি, অটোরিকশায় বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাজার হাজার শ্রমিক হাটে এসেছেন শ্রম বিক্রি করতে। পুরুষের পাশাপাশি অসংখ্য নারী শ্রমিকদেরও দেখা মেলে। মহাসড়কের পাশে হাতে কাস্তে ও ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে শ্রম
বিক্রির অপেক্ষায় আছেন তারা। দরকষাকষি করে মতের মিল হলেই চলে যাচ্ছেন গৃহস্থের সঙ্গে। সারাদিনের জন্য ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় চুক্তি হয়। তবে নারীদের দেওয়া হয় ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টার মধ্যেই বেচাকেনা চলে। সারাদিন কাজ শেষে সন্ধ্যায় মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান থেকে যানবাহনযোগে বাড়ি ফিরে যান শ্রমিকরা।
নয়াবাজার এলাকার গৃহস্থ মনিরুজ্জামান পাঁচ বিঘা জমিতে বিনা চাষে রসুন রোপন করবেন।
হাটে এসে জনপ্রতি ৫৫০ টাকা দিয়ে ২০ জন শ্রমিক কিনেছেন।
তাড়াশের শ্রমিক বেনতী হাজং বলেন,
পুরুষের সমান কাজ করেন। কখনও বেশিও
করেন। কিন্তু মজুরি কম দেওয়া হয়।
- বিষয় :
- হাট-বাজার