ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

সাঁতার না জানায় বাড়ছে মৃত্যু সুইমিং পুল চায় শহরবাসী

সাঁতার না জানায় বাড়ছে মৃত্যু সুইমিং পুল চায় শহরবাসী

ফাইল ছবি

হাসানউজ্জামান, ফরিদপুর

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:৫৬

সপ্তাহ দুয়েক আগে নানাবাড়ি বেড়াতে যায় ফরিদপুর শহরের পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র শাওন মিয়া। সেখানে খেলতে খেলতে এক পর্যায়ে বাড়ির পাশের পুকুরে ডুবে তার মৃত্যু হয়। এর আগে ১১ আগস্ট কুমার নদে গোসলে নেমে প্রাণ যায় সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সালেহ আহমেদ ফাহাদের। শহরবাসী বলছে, শহরে কোনো পুকুর, খালবিল নেই। এ কারণে ছেলেমেয়েরা সাঁতার শিখতে পারে না। তাই পানিতে ডুবে অকালে প্রাণহানি বাড়ছে। সাঁতার শেখার জন্য একটি সুইমিং পুল থাকলে এভাবে প্রাণ ঝরত না।
পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ওয়াহিদুল ইসলাম সোহাগ জানান, শাওনের মৃত্যুর পর স্কুলে মিলাদের আয়োজন করা হয়। সেখানে শিক্ষক-অভিভাবকরা শিশুদের সাঁতার শেখার জন্য শহরে একটি সুইমিং পুল নির্মাণ করতে প্রশাসনের কাছ দাবি জানান।
এদিকে কলেজছাত্র ফাহাদকে হারিয়ে পাগলপ্রায় তার বাবা হোসেন আহমেদ বলেন, ‘আর যাতে এভাবে ডুবে কোনো মা-বাবার বুক খালি না হয়, সে জন্য শহরে যেন সাঁতার শেখার ব্যবস্থা করে সরকার।’
জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে শুধু ফরিদপুর শহরেই পানিতে ডুবে ২১ জন মারা গেছে। তাদের কেউই সাঁতার জানত না। এক যুগে শহরের ৭৩টি পুকুর দখল অথবা ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে শিশুরা কোথাও সাঁতারও শিখতে পারে না।

ফরিদপুর পৌরসভার তথ্যমতে, ১০ বছরে বেদখল হয়ে যাওয়া পুকুরগুলোর জায়গায় একটিও নতুন পুকুর কাটা হয়নি। যে কারণে পদ্মা নদীর তীরবর্তী শহর হয়েও ছেলেমেয়েরা সাঁতার জানে না। শহরের মধ্য দিয়ে কুমার নদ প্রবাহিত হয়েছে। সেখানে সাঁতার শেখার একটি সুযোগ থাকলেও দীর্ঘদিন খনন না হওয়ায় এবং পানিদূষণ হওয়ায় একান্ত বাধ্য না হলে কেউ নদে নামে না। 
সম্প্রতি সুইমিং পুল নির্মাণের বিষয়ে জনমত নিতে এই প্রতিবেদকের ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। সেখানে মতামত দেন শহরের বিশিষ্ট নাগরিক ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। শহরের আলিপুরে লাবলু সড়কের পাশে বিগত সরকারের আমলে প্রভাব খাটিয়ে দখল করা ২৫ শতাংশ পতিত জমিতে সরকারি উদ্যোগে সুইমিং পুল নির্মাণের দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক প্রশাসনকে প্রভাবিত করে বছর পাঁচেক আগে জেলা প্রশাসন থেকে ওই জমিটি শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের নামে লিজ নেন। পরে সেটি দলীয় কার্যালয় পরিণত হয়। গত ৪ আগস্ট বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা কার্যালয়টি জ্বালিয়ে দেয়। বর্তমানে জায়গাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। সন্ধ্যার পর সেখানে বসে মাদকের আসর।
ফেসবুক পোস্টের মন্তব্যে সমাজকর্মী মহুয়া ইসলাম লেখেন, ‘শহরে এখন পুকুর নেই বললেই চলে। আমাদের সময়ে প্রত্যেক বাড়িতেই নিজেদের পুকুর ছিল।’
সাংবাদিক শেখ মনির হোসেন লেখেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে শুধু শিশুদের সাঁতার শেখানোর জন্য সুইমিং পুল দরকার। অতি অল্প সময়ের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন হলে উপকৃত হবে শহরের অভিভাবকরা। কমে আসবে সাঁতার না জানা শিশুদের প্রাণহানি।’

এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক সুলতান মাহমুদ হীরক বলেন, প্রভাব খাটিয়ে দখলে নেওয়া ২৫ শতাংশ অর্পিত সম্পত্তি পরে দলীয় কার্যালয়ে রূপ দেওয়া হয়। এখন যেহেতু পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে, জায়গাটি জনস্বার্থে কাজে লাগানো সময়ের দাবি। 
ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আওলাদ হোসেন বাবর বলেন, সরকারি উদ্যোগে অনতিবিলম্বে শহরের জনবহুল এলাকায় সাঁতার শেখার ব্যবস্থা করার দাবি জানাই।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মোল্লা বলেন, শহরে শিশুদের সাঁতার শেখার চন্য একটি সুইমিং পুল নির্মাণের দাবির সঙ্গে আমিও একমত। আমরা শিগগির উপযুক্ত জায়গা ও বরাদ্দ পেলে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেব।

আরও পড়ুন

×